
নিজস্ব প্রতিনিধি: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সবজি চাষিরা। খুচরা বাজার থেকে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারি বাজারে। অর্থাৎ চাষিদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। চাষীদের কাছ থেকে যে সবজি ১০ কেজি দরে ক্রয় করা হয় তা ব্যবসায়ীদের ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের । চাষিদের লোকসান হলেও বেশি লাভবান হচ্ছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য দেখা যায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। এতে উৎপাদিত সবজির সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ সবজি চাষিরা।
উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছ থেকে সবজি কম দামে কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা কিন্তু খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের মাথায় হাত বুলিয়ে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়া বেপারীরা। আর সাধারণ ক্রেতারা সবজি কিনতে গিয়ে দিশেহারা। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে খড়কমারা (সিএন্ডবি) পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেগুন প্রকার ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, কাকরোল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, জালি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিছ, ঝিঙা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি, ধুন্দুল ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি, ঢেঁরস ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, করলা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, শসা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ফড়িয়া ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কৃষকদের থেকে খুব অল্প টাকায় বিভিন্ন সবজি কিনে থাকেন। সেই সবজি স্থানীয় খুচরা বাজার ও দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। স্থানীয় বাজারের ফড়িয়া এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলেই কৃষকদের ঠকিয়ে বড় অঙ্কের লাভ করেন তারা।
খড়কমারা বাজার থেকে ইটাখোলা গোল চত্বর বাজারের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। আর এই ৪ কিলোমিটার দূরেই কেজি প্রতি বিভিন্ন ধরনের সবজির দামের পার্থক্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। তবে ক্রেতারা বলছেন, মাঠ থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সঠিকভাবে মনিটরিং না করার কারণেই বাজারের এই অস্থিরতা।
বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন তারা। বাঘাব ইউনিয়নের ব্রাক্ষন্দী গ্রামের সবজি চাষি মো. দারগ আলী জানান, ৩ বিঘা জমিতে বেগুন, কাকরোল, করলা ও শসা চাষ করেছেন তিনি। খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। প্রথম প্রথম উৎপাদিত সবজির দাম বেশি পেলেও এখন কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় লোকসানের পরিমাণ বেশি গুনতে হচ্ছে।
খড়কমারা গ্রামের কৃষক মাসুম ভূঁইয়া ও শাহজাহান জানান, আমরা প্রায় দুই বিঘা জমিতে বেগুন, জালি, করলা ও কাকরোল চাষ করেছি। আমাদের স্থানীয় বাজারে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে অল্প দামে বিক্রি করা লাগে বলে আমরা শহরে গিয়ে বিক্রি করেছি। এতে দামও পাই ভালো। পাইকারি ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন ও মাসুম মিয়া বলেন, আমরা কৃষকদের কাছ থেকে যে দামে সবজি কিনি তার দাম বাড়ানোর কারসাজি আড়তদার এবং খুচরা ব্যাবসায়ীরা করে থাকেন। এসব সবজি কেনার ক্ষেত্রে ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ দিয়ে আমরা কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা লাভ করে থাকি। অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়।
এদিকে খড়কমারা বাজারে কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাত কেন্দ্রের সহায়তাকারী রুবেল মোল্লা বলেছেন, আমাদের এই কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি হয়। কেন্দ্রের বাইরে যারা ক্রয় বিক্রয় করেন তাদেরই মূল্যের তারতম্য বেশি থাকে। মূলত পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিয়ে থাকে।
শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন, চলতি মৌসুমে শিবপুর উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর।সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। সবজি উৎপাদনও খুব ভালো হয়েছে।উৎপাদিত কৃষি পণ্য কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বিক্রয়ের মাঝে যে মূল্যের ফাঁক রয়েছে তা আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় সেজন্য কাজ করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।'