নাসিম আজাদ: নরসিংদীর পলাশে স্ত্রীর সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ছোট ভাইকে মোবাইলে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে মিনহাজুল হক খান (২৪) নামে এক যুবকের আত্মহত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার বিকেলে উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিনহাজুল হক দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের মৃত আরজান মিয়ার ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, প্রায় এক বছর দুই মাস আগে ঘোড়াশাল সারকারখানার এলাকার জাকিয়া সুলতানা ইকরা নামে একজনকে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে মিনহাজুল হক খান। বিয়ের পর থেকেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন সমস্যা না থাকলেও সম্প্রতি মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তার সাথে আর সংসার করতে চায় না স্ত্রী এবং কাবিন নামার টাকা চাইতে থাকে তার শাশুড়ী।
এরইমধ্যে গত রবিবার (২৩ অক্টোবর) তার শাশুড়ী তাকে না জানিয়ে স্ত্রীকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। এসব কারণে মিনহাজুল মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরে রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে দক্ষিণ চরপাড়ার নিজ বাসায় ঘরের দরজা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সাথে রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে মিনহাজুল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ছোট ভাই, মেজবাহ জানান, স্ত্রী ও শাশুড়ী মিলে আমার ভাইকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিতো। তার সাথে সংসার করবে না বলে কাবিন নামার টাকা চাইতো। এমনকি স্ত্রী আত্মহত্যা করে আমার ভাইকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথাও বলতো। এ বিষয়ে আমরা থানায় জিডিও করেছিলাম। এ নিয়েই আমার ভাই মানসিকভাবেই ভেঙে পড়ে। গতকাল রবিবার বিকেলে ৩টার দিকে আমার মোবাইলের ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি ভয়েস রেকর্ডিং পাঠিয়েছে। সেখানে সে বলেছিল, "ভাই আমার যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোকে অনেক বকাঝকা করেছি, সবাইকে বলিস আমাকে ক্ষমা করে দিতে। "মনে হয় আমি আর বাঁচবো না"।
পরে আমি তাকে বলি তুই এসব কি বলতেছিস, এমন কথা বলতে নেই। এসব কথা না বলে ভালোমতো চলাফেরা করো, আর দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আয়, তাহলে ভালো লাগবে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম খাবার খেয়েছে কিনা, সে বলেছে না। আমি বলেছিলাম তাকে খাবার খেতে। এসব বলার পর কলটি কেটে দেয়। তখন আমি বুঝতে পারি হয়তো সে কোন অঘটন ঘটাবে।
পরে আমার চাচাকে তার সাথে যোগাযোগ করতে বললে তিনি অফিসে থাকায় চাচীকে বাসায় পাঠান। বাসায় গিয়ে চাচি তার সাথে কথা বলে। তখন চাচীকে ভাই জানায়, সারাজীবন একলা ছিলাম একলাই থাকবো। আমাকে সে বুঝলো না, তার (স্ত্রীর) জন্য কত কিছু করলাম, কত কিছু ছাড়লাম। সে আমাকে বুঝলো না, আমাকে সবসময় ভুলই বুঝেছে। এসব বলেই ভাই দরজা লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে তার সাড়াশব্দ না পেয়ে ও দরজা না খোলায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নাইবুল ইসলাম জানায়, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ঘরের দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করি। আমরা জানতে পারি তার স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিলোনা। পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল। গত রবিবার তার স্ত্রী তাকে বাসায় রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।