নাসিম আজাদ: শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিরসনে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পাঠক্রম” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর আশুলিয়া ক্যাম্পাসে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিহতের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের ডাক দেন এইউবি কর্র্তৃৃৃপক্ষ। এ বিষয়ে এইউবি’র অবস্থান দৃঢ়, যা এইউবি’র শিক্ষাক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সভায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক অবস্থানে থাকলে জঙ্গিরা শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ কোনোদিন স্থায়ী ভিত্তি গড়তে পারেনি, অদূর ভবিষ্যতেও পারবেনা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এইউবি উপাচার্য ইমেরিটাস প্রফেসর ড. শাহজাহান খান। প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি, গবেষক ও কথাসাহিত্যিক ড. এসএম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম, সাবেক ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দর্শনাচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, উপাচার্য, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. মো: নূরুল ইসলাম, ট্রেজারার, এইউবি।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট কবি একে বোরহানউদ্দিন, সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তিনি কেন সন্ত্রাস সংঘটিত হয়, তা তুলে ধরেন এবং বলেন রাষ্ট্রীয় শক্তি বড় শক্তি যেখানে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ কখনো সুযোগ পাবে না, নির্মূল হবেই, সফল হবে না।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আওরঙ্গজেব খান। এতে উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন এইউবি রেজিস্ট্রার একেএম এনামুল হক। আশুলিয়াস্থ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইয়াসিন আরাফাত পাপ্পু, সভাপতি, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগ। সেমিনারে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে বক্তৃতা দেন শামসুল ইসলাম রানা।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এসএম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে দেশে কখনোই জঙ্গিবাদ বাসা বাধতে পারবে না, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। কারিকুলাম এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়। শিক্ষা কার্যক্রমের ভিতর দিয়েই শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে যাতে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের বিপথগামী করতে না পারে। তিনি আরও বলেন যে, আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি তার কারিকুলাম এমনভাবে সাজিয়েছে যে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধর্মের অনুশাসন ও দেশ প্রেমের শিক্ষা নিয়ে নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে। এইউবি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা সদা সতর্ক থাকলে শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই বিপথগামী হবে না। কোনো শিক্ষার্থী টানা ১০ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকদের থেকে খোঁজ নিতে হবে।
সেমিনারের বিশেষ বক্তা এইউবি ট্রেজারার মহোদয় বক্তব্যের শুরুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের চ্যান্সেলর কর্র্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার কারণে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে যে কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছেন তার প্রশংসা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে এইউবি উপাচার্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের মহাসড়কে আমরা অবস্থান করছি। মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের ছাত্রসমাজ সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে এবং গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্ঠি করেছে।কিন্ত সেই ঐতিহ্য খর্ব হচ্ছে কিছু বিপথগামীদের দ্বারা। আমাদেরকে প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে এই জঙ্গীবাদের শুরুটা কিভাবে হয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়, সুশিক্ষা এবং সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবেই জঙ্গীবাদের উত্থান। জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভুমিকা রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম এমনভাবে তৈরী করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই বিপথগামী হতে না পারে। তিনি উপস্থিত সবাইকে জানান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি এমন একটি কারিকুলাম তৈরী করেছে যেখানে শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান, ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছে, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে।
প্রধান বক্তা’র বক্তব্যে দর্শনাচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষাগ্রহণ করতে এসে শিক্ষার্থীরা যদি সঠিক শিক্ষা না পায়, তাহলেই শিক্ষার্থীরা দিকভ্রান্ত হবে। আমরা যারা উচ্চশিক্ষা প্রদানের কাজে নিয়োজিত আছি, আমাদেরকে আগামী প্রজন্মের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের তরুণ, যুবক শিক্ষার্থীরা আমাদের সম্পদ, দেশের যোগ্য নাগরিক, বিশ্বকে বদলে দেয়ার কারিগর।
উচ্চশিক্ষাখাতে সরকারকে আরো বরাদ্দ বাড়াতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কো কারিকুলাম এক্টিভিটিজের সাথে যুক্ত হতে পারবে। পড়াশুনা করে শিক্ষার্থীরা নৈতিক মানে উন্নত হবে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
সেমিনারে বিশিষ্ঠজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের উপর গুরুত্বারোপের কথা তুলে ধরেন। সবশেষে, সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সেমিনার কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করেন এইউবি উপাচার্য। সেমিনারটি সঞ্চালনায় ছিলেন এইউবি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুক্তাশা দিনা চৌধুরী।