হলধর দাস: আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যে লালিত জাতীয় ফল কাঁঠালের বাৎসরিক বিদায় উৎসব । নরসিংদী'র শিবপুর উপজেলার কামারটেক বাসস্ট্যান্ড বাজারে এই উৎসব অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। জৈষ্ঠ্যমাস আর আষাঢ় মাসে শিবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার সবুজ পাহাড়,কামারটেক,যোশর,মর্জাল,ছোটাবন্দ,নৌকাঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গুরুত্বের সাথে কাঁঠাল চাষ করে।
জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাঁঠালের পরিচর্যাকে অত্র এলাকার মানুষ অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই শতবছর যাবৎ এলাকা মানুষ শ্রাবনের শেষদিকে মৌসুমের শেষ পর্যায় হিসেবে কাঁঠাল বিদায় উৎসব পালন করে থাকে। এরই অংশ হিসেবে গত ২৭ জুলাই কামারটেক বাসস্ট্যান্ড বাজারে অনুষ্ঠিত হলো কাঁঠাল বিদায় অনুষ্ঠান।
তাই মৌসুমের এই শেষ অংশে বড় বড় কাঁঠাল নিয়ে বিভিন্ন সাজে বহর সাজিয়ে বিয়ের বাদ্যবাজনার মতো করে যেন বিদায় জানায় কাঁঠাল বোঝাই ভ্যানগাড়িকে। কাঁঠাল ব্যাপারীরা আগে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন কাঁঠাল বাগান অধিক মূল্যে কিনে নেয়। অধিক মূল্য পেয়ে বিয়ে বাড়ির মতো খাবারের আয়োজনও করে তারা।
কেউ কেউ এই উৎসবকে কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’ বলে থাকে।
কামারটেক এলাকা ছাড়াও শিবপুরের বিভিন্ন এলাকায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে বাঘাব, জয়নগর ও যোশর ইউনিয়নে এই উৎসব কদর একটু বেশী।
কাঁঠাল বেপারীরা মৌসুমের শেষের দিকে বড় বড় কাঁঠাল ভ্যানে বোঝাই করে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের কাগজ, নিশান-বেলুন দিয়ে সাজিয়ে স্থানীয় চৈতন্যা, কামারটেক, গাবতলী, বারিচা ও মরজাল বাজারে আড়ৎএ নিয়ে বিক্রি করেন। এসময় ভালো দামও পাওয়া যায়। আর্থিকভাবে লাভবানও হয় অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশী।
শিবপুর উপজেলার কামারটেক এলাকার বাসিন্দা সৌখিন কাঁঠাল চাষী রোটারিয়ান মোঃ বশিরুল ইসলাম বলেন, কাঁঠাল বাগানের পরিচর্যার প্রধান কারণ হলো আমাদের এলাকার জন্য আয়ের একটা বড় অংশ কাঁঠাল থেকে আসে। তাই এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই কাঁঠাল বিদায় উৎসব পালন করে থাকে আমাদের এলাকার কৃষকেরা। আমার পূর্বপুরুষরা এটা পালন করে আসছে। এ উৎসব পালন করলেই কাঁঠালের চাষে কদর বহাল থাকবে। একই কথা বললেন কাঁঠাল ব্যবসায়ী (আড়ৎদার) রাশেদ মিয়া, নাসেত মিয়া, বাজার কমিটির সভাপতি গোলাপ মিয়া, কাঁঠাল বেপারী দুলাল মিয়া ফারুক ভূঞা ।
ছোটাবন্দ এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া জানান, আমার পূর্বে বাবা-দাদারাও পালন করেছে কাঁঠাল উৎসব। আমিও পালন করছি। আমার পরবর্তী প্রজন্মও তা ধরে রাখবে।
শিবপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল চন্দ্র দেবনাথ জানান, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জয়নগর, যোশর ও বাঘাবো ইউনিয়নে সব থেকে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়ে থাকে।
এখানে হেক্টরপ্রতি ৪০ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই হিসাবে উপজেলায় এ বছর ৬শ ৮৫ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। কাঁঠাল যাতে বারোমাসী উৎপাদন করা যায়, সেই বিষয়ে কৃষি বিভাগ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে আর এটি শুরু হলে কৃষকেরা সবসময় কাঁঠাল উৎপাদনের পাশিাপাশি উপযুক্ত মূল্যও পাবেন।
উল্লেখ্য, এই এলাকার সুস্বাদু কাঁঠাল ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাড়াও দেশের বাহিরে রফতানি হয়ে থাকে।