
স্টাফ রিপোর্টার: লজ্জা নারীর ভূষণ। আর ইসলামে নারীকে পর্দানশীন থাকতে কথা বলা হয়েছে। খলিফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে বেপর্দা নারীকে একশ দোররা মারা প্রচলন ছিল। আর সেই নারীর যদি কোন পুরুষকে দেহদান করে তবে শান্তি ছিল গলা পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে শুধুমাত্র মাথার অংশটুকু বের করে রাখা হতো এবং তা পাথর নিক্ষেপ করা হতো। অথচ বর্তমান সময়ে নারীদের বেল্লাপনা আমাদের সমাজকে কুড়ে কুড়ে খেলেও কারোই যেন কিছু বলার। তবে বিভিন্ন সময়ে নারীদের বেপর্দার কথা বর্ণানা দিয়ে পুরুষেরা তাদের চরিত্র হনন করতেন। কিন্তু কোন নারীকে কখনো তার নিজের চরিত্র নিজেকে হনন করতে দেখা বা শুনা যায়নি।
নরসিংদীতে এমনই এক ব্যতিক্রমি নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। শারমিন রেজোয়ানা ইভা (৩৬) নামে ওই নারী নিজের মুখে বহু পুরুষকে দেহদানের কথা বলে বেড়াচ্ছে। তবে বলে বেড়াচ্ছেন বললে ভুল হবে। তিনি রীতিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তার চরিত্র হনন করছেন। পাশাপাশি চরিত্র হনন করচ্ছে সমাজের কোন ধনী, শিল্পপতি বা সম্মানিত ব্যক্তির।
পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা শারমিন রেজোয়ানা ইভা মাধবদীর আলগী গ্রামের মৃত মো. আব্দুস সাদেকের মেয়ে। বর্তমানে এই নারী ২০২ পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি মাধবদীর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষিকা।
শারমিন রেজোয়ানা ইভা নামে এই নারী নরসিংদীর জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌন হয়রানি অভিযোগ তুলে ফেসবুক লাইভে এসে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে ওইসকল ব্যক্তিদের মানহানী করচ্ছে। মূলত এই সব সম্মানীত লোকদের মানহানী করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার উদ্দেশ্য। যার প্রমাণ ফেসবুকের বদৌলতে ইতিপূর্বে নরসিংদীবাসী দেখতে পেয়েছে। দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর ধরে এই রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সম্মানী ব্যক্তিদের মানহানী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত অপরাদমূলক কাজ করে গেলেও আইনের আওতায় আনা হয়নি এই নারীকে। ফলে দিন দিন সে হয়ে উঠছে বিধ্বংসী। নানাভাবে হেনস্তা করে আসছেন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের।কেউ কিছু বললেই ধর্ষণের মামলা ও অভিযোগ দিয়ে দেন। ফলে মানসম্মানের ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চান না। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ছবি এবং ভিডিও এডিট করে এই নারী তার প্রোফাইলে পোস্ট করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এই শিক্ষিকার হীন কাজের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পুরো জেলাবাসী।
নরসিংদী পুলিশ অফিস সূত্রে জানা যায়, এই নারী এখন পর্যন্ত সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি মাধবদী থানাধীন পাঁচদোনা দক্ষিণ চন্দন এলাকার মৃত সাহাজ উদ্দিনের ছেলে সাঈদ হাসান কাজল (৫২)। যিনি বর্তমানে ভেলানগর এনকেএম স্কুল পাশে রোমানের ভাড়া বাড়িতে থাকেন তার নরসিংদী সদর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এই নারী বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে মামলা করেই ক্ষান্ত হননি। পাশাপাশি তার ফেসবুক টাইমলাইনে সম্মানিত ব্যক্তিদের ছবি পোস্ট করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আবার তার সেই কাঙ্খিত টাকা পেলে ফেসবুকের লাইভে এসে ওই সব ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমা চাওয়ারও ভিডিও প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ পরিস্থিতিতে নরসিংদীর শিক্ষা বিভাগও তাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থায় সহকারি শিক্ষিকা শারমিন রেজোয়ানাকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ এর ২ এর (ক), (ঘ), (চ) ও (ছ) ধারা লঙ্ঘণপূর্বক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল কথাবার্তাসহ নেতিবাচক পোস্ট করায় তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলাটির চলমান ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা মোতাবেক সহকারি শিক্ষিকা শারমিন রেজোয়ানাকে গত ৯ এপ্রিল জেলা শিক্ষা অফিস এই আদেশ কার্যকর করে তাকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আমলে এক নেতার সুপারিশে তিনি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। এরপর মহৎ পেশার আড়ালে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। নিজেকে এতিম ও অসহায় দাবি করে সহায়তা চান এবং ভিডিও কল দিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করে কৌশলে গোপনে স্ক্রিনশট নেন। একসময় দেখা করার অনুমতি চান। নানা সমস্যার কথা বলে সহায়তা চান। ঘনিষ্ঠতা বাড়লে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। রাজি না হলে নানা হুমকি দেন। যদি তাও কাজ না করে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। না দিলে প্রথমে তার ফেসবুক টাইমলাইনে এসব ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। তাতেও কাজ না হলে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে দেন। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার ফাঁদে পা ফেলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্মানিত মানুষ হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তার বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ঠিকাদার, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদসহ অসংখ্য মানুষের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। তার ফেসবুকে এসব ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে ধর্ষকসহ নানা আপত্তিকর লেখা লিখে রেখেছেন।
টাকা না দিলেই তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় পুলিশি অ্যাকশন। এই নারী বেশ কয়েকজনকে জেলও খাটিয়েছেন এবং পরে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আপস করেছেন। তবে আপস হওয়ার পরও আবার টাকা দাবি করছেন। টাকা না দিলে তার ফেসবুকে আবারও আপত্তিকর লেখা পোস্ট করছেন। এমনকি পিতা-পুত্রের ছবি পোস্ট করেও আপত্তিকর লেখা লিখেছেন। ফলে এই নারীর জন্য অনেক সংসারে সৃষ্টি হয় অশান্তির।যার আগুনে পুড়ে ভেঙে গেছে অনেকের সংসার ।
ধর্ষণের মত ঘৃণতম বিষয়টিকে ব্যবসা হিসেবে নেওয়া এই নারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে।