স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি অসদাচরণসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বামী মোঃ সাদিউল ইসলাম কর্তৃক মালামাল ক্রয়ের নামে কাল্পনিক ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন, হিন্দুধর্মীয় শিক্ষার্থীদের শাঁখা খুলে-সিঁদুর মুছে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নির্দেশনা প্রদান করে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেয়া উল্লেখযোগ্য।
বিদ্যালয়টির চল্লিশ জন শিক্ষক একযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ।
অভিযোগে প্রকাশ, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছচারিতা আর মানসিক নির্যাতনের কারণে অতীষ্ট হয়ে পড়েছেন শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মচারীরা। ফলে স্তিমিত হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক এক বছর আগে বিদ্যালয়ে যোগদান করেই ৭/৮ বছর যাবৎ অনলাইন পদ্ধতিতে পাওনাদি আদায়ের পরিবর্তে অফলাইনে পাওনাদি আদায় করে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন।
প্রধান শিক্ষক কেনাকাটার জন্য তাঁর স্বামী মোঃ সাদিউল ইসলামকে নির্দিষ্ট ঠিকাদার বানিয়ে বাৎসরিক আনুসঙ্গিক খরচের সরকারি বরাদ্ধের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা সহ বেসরকারি সকল কেনাকাটার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
প্রধান শিক্ষকের কথামত ভুয়া ভাউচার পাশে সহযোগিতা না করায় বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারী নাজমা বেগমকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ওএসডি করে রেখে তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ দেন। শ্রেণিতে পাঠদান কাজের বেঘাত ঘটিয়ে কেরানীর কাজ করাচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে। নাজমা বেগম যথাযথ জবাব দেয়ার পরও তাকে তার কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রেখেছেন।
২০২২ সালে ভর্তি ফি ছাত্রী প্রতি ৫০ টাকা করে ‘নগদ’এ্যাপের নামে কমিশন আদায় করেন। কিন্তু টাকা হাতে হাতে গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক।
২০২২সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিবাহিত হিন্দু পরীক্ষার্থীদের শাঁখা খোলা ও সিঁদুর মুছে ফেলার ঘটনাটি তারই নির্দেশনায় করেন সহকারি শিক্ষক আকিকুন্নাহার। প্রধান শিক্ষক নিজেও বাংলা পরীক্ষার দিনে হিন্দু নারী পরীক্ষার্থীদের শাঁখা খুলে, সিঁদুর মুছে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে কঠোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উচ্চমান সহকারি নাজমা বেগম এর কারণ দর্শানোর লিখিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বাজেটে মালামাল ক্রয়ের টেন্ডারে প্রধান শিক্ষকের স্বামীর পণ্য সরবরাহকারী কেরানীগঞ্জের প্রতিষ্ঠান “গ্রীনমার্ট” এর অনুকূলে কোন মালামাল ক্রয় না করেই প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে বিল তৈরী করে টাকা উত্তোলন শেষে উচ্চমান সহকারি নাজমা বেগমকে মালামালের চালান কপি ও কোন মালামাল না দিয়ে শুধু মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়ে স্টক রেজিস্টারে মালামালের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে বলেন।
মালামাল ছাড়া স্টক রেজিস্টার লিপিবদ্ধ না করায় প্রধান শিক্ষক তাকে পর পর তিনটি অফিস আদেশ করেন। আদেশ নং (১)ন.স.বা.উ.বি/২০২২/৫৬৭ তারিখ: ১৩/০৪/২০২২খ্রিঃ, (২) ন.স.বা.উ.বি/২০২২/৫৯৫ তারিখ: ২২/০৫/২০২২খ্রিঃ,(৩) ন.স.বা.উ.বি/২০২২/৫৯৫ তারিখ: ২৫/০৫/২০২২খ্রিঃ। ১নং আদেশের কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে সম্পন্ন করেন। ২নং ও ৩নং আদেশের কার্যক্রম সম্পন্ন না করে ০৮/০৬/২০২২ তারিখে স্কুল ছুটির পর অফিস রুমে উচ্চমান সহকারির ব্যবহৃত আলমারীর তালা ভেঙ্গে সমস্ত রেকর্ড পত্র ও ফাইল নিজের অধিকারে নিয়ে যায়। এছাড়া দেখা যায় যে, প্রধান শিক্ষক টেন্ডারের বিলে সই করেছেন ১৪/০৩/২০২২ইং তারিখে আর স্টক রেজিস্টার তা গ্রহণ করে মালামালের এন্ট্রি দিয়েছেন ২৫/০৪/২০২২ইং তারিখে ।
ছাত্রী কল্যাণ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন তা ছাত্রীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার মোঠোফোনে জানান, “আমার বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণ ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। ভাউচারের মাধ্যমে মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের বিষয়টিও সঠিক নয়। মালামাল বুঝে নিয়েই ভাউচার পাস করিয়েছেন সিনিয়র শিক্ষক মোঃ মোস্তফা মিয়া।
শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ এর ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাশ করেন না, সঠিকভাবে খাতাও দেখেন না বলে আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে শিক্ষকদের কিছু বললেই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্রর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করে দায়ের করা আবেদনের অনুলিপি পেয়েছি। এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমাণিত হলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া একান্তই আবশ্যক। '
নরসিংদী পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া একান্ত আবশ্যক।