স্টাফ রিপোর্টার, তাহিরপুর: পঞ্চম শ্রেণি পাশ না করেই নিজেকে অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট (ডাক্তার) পরিচয় দিয়ে গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুল হান্নান। বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন কিংবা কোনো অনুমোদন ছাড়াই কলেজ রোডে চালাচ্ছেন চিকিৎসা কার্যক্রম।
এমন অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট কলেজ রোডে থাকা ডেন্টাল কেয়ারের পরিচালক ও কথিত ডেন্টিস্ট আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় সারা দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন,আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদনহীন, লাইসেন্সবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ক্লিনিক,ডেন্টাল কেয়ার কাম ক্লিনিক বন্ধে তৎপর হয়েছেন।
কিন্তু কথিত হান্নানের অবৈধ ডেন্টাল কেয়ারসহ তাহিরপুরের বাদাঘাটে নামে বেনামে থাকা আরও একাধিক অনুমোদনহীন ডেন্টাল কেয়ার, ভুয়া ডেন্টিস্টদের ব্যাপারে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, তাহিরপুরের বাদাঘাট কলেজ রোড থাকা ডেন্টিস্ট আব্দুল হান্নানের ডেন্টাল কেয়ারের প্রবেশদ্বারের সামনের থাই গ্লাসের সঙ্গে লেখা রয়েছে একাধিক ডিগ্রি (ডি.ডি.টি.এ. কিউ,এইচ,সি.বি.ঢাকা) ও অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসক।
কথিত ডেন্টিস্ট হান্নানের নিকট তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ডেন্টিস্ট দাবির বিপরীতে একাডেমিক এবং বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন (অনুমোদনপত্র) কিংবা ডেন্টাল বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সমাপনীর কোনো সনদপত্র বা কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি।
এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে যশোরের বাসিন্দা দাবি করে বলেন, আমি গত ১৫ বছর পূর্বে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে ফুটপাতে হকারি করে দাঁতের মাজন ও বিভিন্ন মলম, ট্যাবলেট বিক্রয় করার পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসা করতাম।
এরপর ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ১৫ বছর পূর্বেই এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হলে তার মাধ্যমে তাহিরপুরের বাদাঘাট এলাকায় এসে সপরিবারে বসবাস করতে থাকি। নিজের অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করেই গত কয়েক বছর পূর্বে দন্ত চিকিৎসালয় নামে ডেন্টাল কেয়ারটি চালু করি কলেজ রোডের স্কুল মার্কেটে। ডি.ডি.টি.এ.কিউ.এইচ,সি.বি.(ঢাকা)সহ এসব ডিগ্রি প্রবেশ দ্বারের সামনে লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তাহিরপুরের বাদাঘাট এলাকায় আব্দুল হান্নানকে শুরুর দিকে আশ্রয়দাতা আব্দুস সহিদ বলেন, আমার জানা মতে হান্নান পঞ্চম শ্রেণি বা পাঠশালার পড়াশোনাই শেষ করতে পারেনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, গত ৪ জুন শনিবার ওই বাজারে মোবাইল কোর্ট চলাকালে আব্দুল হান্নান কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই জানালে আমরা তাকে ওই ডেন্টাল কেয়ার অনুমোদন সংগ্রহ করা বা ওই ডেন্টাল কেয়ার দ্রত গুটিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, যতদূর জানা গেছে ওই দন্ত চিকিৎসক বা একজন ভুয়া ডেন্টিস্ট হতে পারেন। আমার জানা মতে কোথাও ডেন্টাল কেয়ার চালু করতে হলে নূন্যতম এসএসসি পাস করার পর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) হতে হবে। তাও বিডিএস ডেন্টাল সার্জনের অধীনে তাকে দন্ত চিকিৎসা সেবায় সহযোগী হিসাবে কাজ করতে হবে।।