হলধর দাস:
নরসিংদীর শিবপুরের কামারটেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড' নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি, আমদানী ও সরবরাহকারী ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ: কারখানাটির বর্জ্যের দুর্গন্ধে অতীষ্ঠ এলাকার লোকজন। দুর্গন্ধের কারণে পাশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীরা চলে যাওয়ায় স'মিল সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর অনুরোধে গত ১৭ অক্টোবর নরসিংদী প্রেসক্লাব এ প্রতিনিধিসহ দুইজন সংবাদ কর্মী সরজমিনে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায় যে, সেখানে শুধু প্লাস্টিক দানা তৈরী করা হয়। অন্য কোন পণ্য সেখানে দেখতে পাওয়া যায়নি। এসময় সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সি.ই.ও কারখানায় ছিল না।
সুপারভাইজার পরিচয় দেয়া জনৈক স্বপন আলী বলেন,কোন কর্মকর্তা নাই। সি. ই. ও -এর ফোন নম্বর নিয়ে যান। পরে ইনার সাথে কথা বলবেন।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মিয়া জানান, সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজে আবর্জনাযুক্ত প্লাস্টিকগুলো পরিস্কার করার জন্য পানির সাথে ব্যবহৃত ক্যামিকেলের দুর্গন্ধে আমরা অতীষ্ঠ এবং দিশেহারা হয়ে থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে বাধ্য হই।
এভাবে তো আর জীবন চলে না। ঠিকমত ছেলেমেয়েরা পড়া- লেখা করতে পারছে না । এ সময় কারখানার কর্তৃপক্ষ কেউ ছিলেন না । এলাকায় সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালেব হোসেন মেমোরিয়াল একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা রোটারিয়ান বশিরুল ইসলাম বলেন, সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে রাখার কোন উপায় থাকে না। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ওদের বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট থাকলে এমনটি হতো না।
গত ৮ নভেম্বর মুঠোফোনে নিজের পরিচয় দিয়ে সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সি. ই. ও -এর কাছে এলাকাবাসীর দু:খ,কষ্ট আর অভিযোগের কথা বললে তিনি প্রথমেই রেগে যান এবং বলতে থাকেন এটা পরিবেশ বান্ধব প্রতিষ্ঠান। আপনি জানেন? নরসিংদী প্রেসক্লাবের বহুত সাংবাদিকের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা এখানে আসাযাওয়া করে। বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট নাই কেন প্রশ্ন করলে তিনি কথা এড়িয়ে যায়।
অথচ, এলাকার বাসিন্দা কৃষক গোলাপ মিয়া বলেন, গত বছর তাদের সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এর দুষিত বর্জ্যের কারণে ১৪ জন কৃষকের জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
এজন্য সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এর পক্ষ থেকে ১৪ জন কৃষককে একলাখ ছিয়াশি হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
গত ৮ নভেম্বর নরসিংদী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে সেইন্ট অনেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অনুমোদন সম্পর্কে জানতে চাইলে এর সহকারী পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায় সারাদিনেও কোন কিছু জানালেন না। তবে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি মোঃ নাজমুল হাসান বলেন, এব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিব।
পরদিন ৯ নভেম্বর মুঠোফোনে সহকারী পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায়-এর সাথে পুনরায় যোগাযোগ করলে তিনি শিবপুর উপজেলা পরিবেশ ইন্সপেক্টর সমর কৃষ্ণ দাসের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু ইন্সপেক্টর সমর কৃষ্ণ দাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেয়া একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় কোন অঘটন ঘটে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।