• নরসিংদী
  • সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

রায়পুরা পৌরবাসীর কষ্টের কারণ ৬ কোটি টাকার ড্রেন


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৯ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৪০ পিএম
রায়পুরা পৌরবাসীর কষ্টের কারণ ৬ কোটি টাকার ড্রেন

মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: নরসিংদী রায়পুরায় ৬ কোটিরও অধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেন বর্তমানে পৌরবাসীর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই  ময়লা দূর্গন্ধযুক্ত পানি উঠে পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা তলিয়ে যায়। চলাচলে নানা সমস্যাসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে পৌরবাসীকে। সঠিক ও যথাযথ ভাবে ড্রেন নির্মাণ না করে কাজের অনিয়ম ও নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মিত ড্রেনটি বর্তমানে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। 

সম্প্রতি রায়পুরা পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ২, ৩, ৪ নং ওয়ার্ডের হাসিমপুর তাত্তাকান্দা, রামনগরহাটি, টেকপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মাসের পর মাস ড্রেনে পানি জমে আছে। আর এই জমে থাকা পানিতে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা জমে থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চার পাশে। সামান্য বৃষ্টিতেই দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি উপছে পড়ে বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটসহ মানুষের বাড়ী-ঘরের আঙ্গিনা তলিয়ে যায়। আর এই পানিতে বিভিন্ন বাড়ী-ঘরের ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনাসহ মলমূত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। আর এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়াতো দূরের কথা এসবের দূর্গন্ধে ঘর থাকাটাই দায় হয়ে উঠে পৌরবাসীর। আর জমে থাকা এসব পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস সহ অন্যান্য মশা। ফলে মশার উপদ্রবের পাশাপাশি ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সাধারণ মানুষ।
এ অবস্থায়  চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছে এলাকার সাধারণ মানুষ। 

পৌর এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ বলছে তাদের ভোগান্তি কমাতে পৌরসভার এ ড্রেন নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে এ ড্রেনই তাদের দূর্ভোগ ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ড্রেন নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতাসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে তারা। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় রায়পুরা পৌর এলাকার সাধারণ মানুষ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, 'পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রন মেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রায়পুরা পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ড্রেন নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মেসার্স মোমিনুল হক নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি নিজে না করে সাব কন্ট্রাকে দিয়ে দেয়। পরর্বতীতে স্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেয়।  কার্যাদেশ পাওয়ার ৩৬৫ দিন অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঘরিমষি ও খামখেলিপনার জন্য তা এখনো চলমান রয়েছে। 

একটি সূত্র জানায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদী কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার শামসুল ইসলামের সময়ে তারই তত্ত্বাবধানে এই ড্রেন নির্মাণ কাজটি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। নরসিংদী কার্যালয় ছেড়ে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন প্রায় এক বছর।  তিনি বদলি হওয়ার এক বছর গত হলেও এখনো পর্যন্ত কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার শামসুল ইসলাম নরসিংদী থেকে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পূর্বেই প্রকল্প মূল্যের ৯০ ভাগেরও অধিক অর্থাৎ প্রায় ছয় কোটি টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেমেন্ট দিয়ে গেছেন। 

এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করলে কাজটি এখনো শেষ হয়নি চলমান আছে একথা শুনেই তিনি যেন চমকে যান। তবে ছয় কোটি টাকা পেমেন্ট দেওয়ার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানান।  পরে পরে নির্মাণ কাজের বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরা হলে এ বিষয়ে তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলবেন বলে জানান।

এর আগে স্থানীয় এলাকাবাসী ড্রেন নির্মাণ কাজের অনিয়মের অভিযোগ তুললে নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের কয়েকজন সংবাদ কর্মী এলাকায় সরজমিন ঘুরে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হলেও বিষয়টি আমলের নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এলাকাবাসীর অনুরোধে নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের ওই সংবাদকর্মীরা পুনরায় পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড সরোজমিন ঘুরে দেখতে গেলে পৌরবাসীর এই অমানবিক দুঃখ দুর্দশা তাদের চোখে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাত্তাকান্দা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের সুবিধার্থে  তৈরি করা এই ড্রেন এখন আমাদেরই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে কতটা কষ্টে আছি তা আপনারাই স্বচক্ষে দেখে যান। আর আমাদের এলাকার কথা কি বলবো।  পৌরসভার সামনে গেলেই দেখতে পাবেন হাঁটু পানি জমে আছে।

রামনগরহাটি মহল্লার সালেহা নামে এক গৃহবধূ বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেন ভরে সেই পানি আমাদের বাড়ি গড়ে উঠে যায়। ময়লা পানির দুর্গন্ধে তখন বাড়িতে থাকা আমাদের জন্য দায় হয়ে ওঠে। জলবদ্ধতার কারণে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারি না ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলেও পাঠাতে পারিনা। তাছাড়া এ জলাবদ্ধতার ফলে মশা মাছি যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে কথা না হয় বাদই দিলাম।

টেকপাড়া এলাকার অপর এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি এই ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য ছয় কোটি টাকারও উপরে ব্যয় করেছে সরকার। সরকারের ৬ কোটি টাকা ব্যয় হলেও আমাদের ছয় টাকারও উপকার আসেনি। বরং আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি কষ্টের শিকার হয়েছি। এই ড্রেন নির্মাণ কাজ যে কতটা নিম্নমানের হয়েছে তা বলা বাহুল্য। ড্রেনের কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। আর বিশেষ করে ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 

এ ব্যাপারে ড্রেন নির্মাণ কাজে সাব কন্ট্রাক্টর দানা মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে আমাদেরকে যে ভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। 

সাব কন্ট্রাক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা প্রকৌশলী স্যার ও পৌর মেয়রের নির্দেশক্রমে কাজ করতেছি। যখন কাজ নিয়ে ছিলাম তখন জিনিসপত্রে দাম কত ছিল আর এখন কত? বিভিন্ন স্থানে ড্রেন ভেঙে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড্রেন করেছি অনেক দিন হয়েছে তাই এতদিনে ভাঙতেই পারে। এলাকায় পানি উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, যে হারে ময়লা আবর্জনা ফেলে তাতে পানি জমতেই পারে। 

অপর সাব কন্ট্রাকটার আরিফ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত যতটা ভালো করা যায় সেভাবেই কাজটা করেছি। বিভিন্ন এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই এলাকাবাসী বাড়ি ঘরের যত ময়লা আবর্জনা এর ড্রেনের মধ্যে ফেলে তা দেখলে অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। আমরা কতবার তাদেরকে না করেছি কে শুনে কার কথা। যেন বাড়ি ঘরের সব আবর্জনা ফেলার জন্য জায়গা এই ড্রেন। তাই ড্রেনগুলো জাম হয়ে এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

রায়পুরা পৌরসভা মেয়র মো: জামাল মোল্লা বলেন, আমাদের পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজ হলে আমরা তদারকি করি। এ কাজের তদারকিতে আমাদের কেউ ছিল না। পুরো কাজটাই তদারকি করেছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কথা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ড্রেনগুলোর আউটপুল খুলে দেওয়ার কথা বললেও ঠিকাদাররা তা করছে না। কাজ নেওয়ার সময় ঠিকাদার দরদাম দেখেই নেয়। কিন্তু কাজ নেওয়ার পরে তাদের নানান ধরনের অজুহাত থাকে এই ধরেন জিনিসপত্রের দাম বেশি। জিনিসপত্রের যদি দাম বেশি থাকে তবে কাজটা নেয় কেন তারা। তারা যদি কাজটা না নেয় তবে সরকার ও বুঝতে পারে এ দামের মধ্যে হয়তো ঠিকাদাররা পৌঁছাতে পারে না তাই কাজ নিতে চাচ্ছে না কেউ। কাজ নেওয়ার পরে তাদের যত অজুহাত বের হয়। তাই অনেক সময় ঠিকাদারকে বাপ সোনা ডেকে কাজগুলো করাতে হয়। 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ড্রেনের আউটপোল  গুলোর মুখ বন্ধ থাকায় এই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো খুলে দিলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ