স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর মনোহরদীতে চোরসন্দেহে গণপিটুনিতে কামাল মিয়া (৩৮) নামে বহিরাগত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গণপিটুনির প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তার মৃত্যূ হয়। রবিবার (৯ জুন) দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। বিকেল ৫টার দিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে মনোহরদী থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে রাতে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এর আগে শনিবার (৮ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের মাইশাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কামাল মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মাইশাকান্দি গ্রামের একটি বাড়ির পাশে রাত তিনটার দিকে দুইজন যুবক সন্দেহজনক ঘুরাঘুরি করছিলেন। বাড়ীর ভিতর একজন তাদের দেখে ডাক চিৎকার শুরু করেন। চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে কামাল মিয়াকে আটক করলেও সাথে থাকা ব্যক্তি পুকুরে লাফিয়ে পালিয়ে যান। এই সময় তারা কামালকে উপর্যুপরি গণপিটুনি দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় নেতিয়ে পড়েন তিনি।
ভোর ৬টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দুলাল মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ হিরনকে অবহিত করেন। পরে তারা দুইজন আহত কামালকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে রওনা হলেও ঢাকা বা নরসিংদীতে না নিয়ে মাঝপথ থেকে আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন। চিকিৎসা না পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কামাল মিয়ার মৃত্যু হয়।
তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেল ৫টায় মনোহরদী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কামালের লাশ উদ্ধার করে। লাশ থানায় আনার পর তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাতেই তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দুলাল মিয়া জানান, সম্প্রতি ওই বাড়ি থেকে গাড়ির মোটর ও পার্টস চুরির ঘটনা ঘটেছিল। শনিবার গভীর রাতে দুজনকে সন্দেহজনক ঘুরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, আবার চুরি করতেই তারা এসেছেন। এরই প্রেক্ষিতে আটক কামাল মিয়াকে পিটুনি দেন তারা। প্রায় ১২ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, পিটুনিতে আহত কামাল মিয়ার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি সেখানে কেন এসেছিলেন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা যায়নি। আর নিহত কামালের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা রয়েছে।
তাঁর স্বজনদের খবর জানানো হয়েছে, তারা এসে মামলা করবেন জানিয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন