স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাদির মোল্লার অন্তত কয়েক ডজন কোরবানি জন্য কেনা গরু-ছাগল শহীদ মিনারে বাঁধা, উঠা-নামানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুসে উঠছে জেলার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কামান্ডের নেতৃবৃন্দ। জাতির জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেয়া শহীদদের প্রতিকৃতি স্বরূপ নির্মিত শহীদ মিনারের অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সভাবেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (২৩ জুন) সকালে শহীদ মিনার অবমাননার প্রতিবাদে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ৭১'র ব্যানারে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সভাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শহীদ মিনার জাতির শ্রদ্ধার স্থান। শহীদ মিনারকে অবমাননা করা জাতিকে অবমাননা করার শামিল। বুঝে করুক কিংবা না বুঝে করুক এমন কাজ যারা করেছে জাতির কাছে ঘৃণিত। যারা ঘৃণিত এই অপরাদ করেছেন তাদেরকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটার সুষ্ঠু সমাধান না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলেও জানান বক্তারা।
এসময় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ৭১ ফোরাম নরসিংদী জেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব পাঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার সাহা, নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা এসএম কাইয়ুম ও মুক্তিযোদ্ধা পবিত্র রঞ্জন দাস মহাদেব সহ প্রমুখ।
এর আগে গত রবিবার (১৬ জুন) পৌর শহরের তরোয়াস্থ (স্টেডিয়াম কম্পাউন্ডে) নরসিংদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোরবানির জন্য কিনে আনা গরু, ছাগল, ভেড়া বেধেঁ রাখার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে শহীদ মিনারের সামনের বেদীতে ট্র্যাকে করে গরু উঠা নামা করে দিনভর। এতে বেদীর উপর গরু ও মানুষের উঠা নামা এবং গরুর গোবর দিয়ে বেদীসহ শহীদ মিনারের স্তম্ভটি নোংড়া করা হয়।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার পবিত্র রঞ্জন দাস মাহাদেব বলেন, দেশ মাতৃকার টানে দেশকে ভালোবাসে জীবনকে বাজি রেখে যারা যুদ্ধে গিয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজকের এই বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপান্তরিত হয়েছে, সেই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি শহীদ মিনারে গরু ছাগল বাধাসহ অবমাননার ধিক্কার জানাই। আমরা কোন ব্যক্তিকে ছোট করতে চাই না ব্যক্তির কর্মটিকে ঠিক করতে চাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হব।
নরসিংদী সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি আব্দুল মোতালেব পাঠান বলেন, জাতির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা সেই শহীদদের প্রতিকৃতি শহীদ মিনারকে অবমাননা করা মানে জাতিকে অবমাননা করা। যারা এই কাজ করেছে প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। যদি না করা হয় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কারো কথা শুনবোনা, আমরা আন্দোলনে পা দিয়েছি, মুক্তিযোদ্ধারা বীরের জাত, তারা পিছু হটে না পিছু হটতে শিখেনি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এর সূরাহ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতা এসএম কাইয়ুম বলেন, আমরা যারা বাঙালি আমাদের অস্তিত্বের ঠিকানা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। আমাদের বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তারা স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনার এবং মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্মৃস্তিসৌধ। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলো অসম্মানিত হলে এটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক ঘটনা। আজকে যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে জাতি হিসেবে, সমাজের মানুষ হিসেবে বা যারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের মনে দাগ কাটবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিশ্বাস করি আজকে যে ঘটনাটি ঘটেছে এর যথাযথ সম্মানজনক সূরাহ হওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে ইচ্ছায় তো নাই বরং অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই ধরনের ঘটনাগুলো যেন না ঘটে আমাদের জাতির যে গর্ভের জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা অসম্মানিত না করতে পারে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সচেষ্ট থাকা উচিত এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের স্পর্শ কাতর ঘটনা না ঘটে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
নরসিংদী প্রেস ক্লাব এর সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার কি সেটা আমার আপনার বোঝার ক্ষমতা আছে। কিন্তু যারা ওখানে এটাকে অবমাননা করেছে যারা শহীদ মিনারের গরু, ছাগল বেধেছে আসলে তাদের কতটুকু শহীদ মিনার সম্পর্কে জ্ঞান আছে সেই বিষয়টি বুঝতে হবে। এটা যদি কারো প্ররোচনায় বা কারো ইচ্ছায় এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা এটা তরিয়ে দেখব। প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আপনারা আমরা সকলে মিলে এটার একটা সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। অবশ্যই শহীদ মিনারকে আমাদের মর্যাদা দিতে হবে।