স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে একই দিনে ময়নাতদন্ত ও পুলিশকে জানানো ছাড়াই হাসপাতাল থেকে দুই দুটি মরদেহ নিয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে সাধারণ মানুষ বলছে কেবল মাত্র জরুরি বিভাগের ব্রাদার ও বয়দেরকে ম্যানেজ করেই মরদেহ নিয়ে যায় স্বজনরা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে ঢাকা মেইল ট্রেনে একযাত্রীর ঘুষিতে আহত ঝুমুর কান্তি বাউলকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঝুমুর বাউলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা দেওয়া পর তার স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিকরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিতে গেলে এমন কোন রোগী হাসপাতালে আনা হয়নি বলে জানানো হয়।
এদিকে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশকে অবগত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঝুমুর বাউলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এই বিষয়টি পর্যন্ত নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা জানেননা।
অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত অবস্থায় রিয়াজুল ইসলাম (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে রায়পুরা থেকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১২ টার দিকে
কোন রকম ময়নাতদন্ত ও পুলিশকে জানানো ছাড়াই রিয়াজুলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় স্বজনরা। এবিষয়টিও জানে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সাংবাদিকরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয় এবং সদর মডেল থানা পুলিশকে জানানো হয়। পরে মডেল থানা পুলিশ রায়পুরা থানা পুলিশকে এ ব্যাপারে অবগত করেন।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ বলছে নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে স্বজনরা কাউকে কিছু না বলে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অহরহ ঘটছে। অবশ্য এর জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার ও বয়দের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিতে হয়। তবেই কাউকে কিছু না বলেই হাসপাতাল থেকে মরে দেহ নিয়ে যাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কথা বলতে গেলে কর্তব্যরত ব্রাদার বলেন, আসলে আমি ভিতরে কখন কিভাবে মরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছে সেটা জানি না। এ ব্যাপারে পরে অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা কিছু জানেনা বলে জানায়। এ সময় প্রতিদিনের বাংলাদেশ প্রতিবেদক মৃত রিয়াজুলের নাম পরিচয় জানতে কর্তব্যরত ব্রাদারকে রেজিস্টার খুলে দেখানোর অনুরোধ করলে তিনি সেটা খুলে দেখান। রেজিস্টার খাতা খুলতেই প্রতিবেদকের সামনে সকাল বেলায় মৃত ঝুমুর বাউলের নাম নজরে পরে। তিনি তখন ওই ব্রাদারের কাছে জানতে চান সকালে কেন তাকে বলা হলো এরকম কোন ব্যক্তিকে এখানে আনা হয়নি। অতি উত্তরে ওই ব্রাদার বলেন এই ব্যক্তিকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তিনি ডিউটিতে ছিলেন না। সে সময় সকালের শিফটের লোক ডিউটিতে ছিল। তাই এ বিষয়ে তিনি বলতে পারেননি
এ ব্যাপারে তৎক্ষণাৎ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডাক্তার ফারহানা আহমেদের নজরে আনলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জেনে পরে জানাচ্ছেন বলে জানান।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আবুল বাশার কমল বলেন, অনেক সময় স্বজনরা জোরপূর্বক মরেদহ নিয়ে গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। আবার অনেক সময় আমাদের অগোচরেই মরদহ নিয়ে যায় স্বজনরা। তবে বিদ্যুৎপৃষ্টে নিহত ব্যক্তির বিষয়ে থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় সিভিল সার্জন ডাক্তার ফারহানা আহমেদকে ফোন করলে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম লোকবল রয়েছে আমাদের। তবে এ ধরনের বিষয়গুলো অবশ্যই পুলিশকে জানানো উচিত। তাৎক্ষণিক কেন জানানো হয়নি আমি তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি। আসলে হাসপাতালের স্টাফদের বেখেয়ালের সুযোগ নিয়ে রোগী স্বজনরা মরদেহটি নিয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে থানা পুলিশকে পরে অবগত করা হয়েছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা যাওার ব্যাপারে আমাকে অবগত করা হয়েছে পরে আমি রায়পুরা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।