• নরসিংদী
  • রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে এক চিকিৎসকের সনদ নেই, তবুও তিনি করছেন সিজার


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৩২ এএম
নরসিংদীতে এক চিকিৎসকের সনদ নেই, তবুও তিনি করছেন সিজার
ডা. মাসুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্টাফ রিপোর্টার: সার্জনের সনদ নেই,  তবুও তিনি করে যাচ্ছেন সার্জারি। এমনই এক ডাক্তারের সন্ধান মিলেছে নরসিংদীতে। যার বিচরণ পুরো নরসিংদী জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে।

তিনি হলেন নরসিংদীর  শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেস্থেসিয়া (অচেতন) ডা. মাসুদ। তার এই সার্জারি করার ঘটনায় যেকোন সময় বড় ধরনে দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।

জানা যায়, প্রায় দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে নরসিংদীতে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত আছেন ডা. মাসুদ। চিকিৎসা শাস্ত্রে জড়িত এমন মানুষ ছাড়াও জেলার অনেক  মানুষের কাছেই পরিচিত ডা. মাসুদ। শুধু নরসিংদীই নয় পার্শ্ববর্তী জেলা  নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর,  কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসক হিসেবে ডা. মাসুদের ব্যাপক কদর রয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নতির সাথে সাথে নরসিংদীতে ব্যাঙের ছাতার মত গজে উঠেছে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল।

আর এইসব ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো মূলত বিভিন্ন রোগের পরিক্ষা নিরীক্ষা ও প্রষূতিদের সার্জারি  নির্ভরশীল। গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে রোগী বাগিয়ে আনতে প্রত্যন্ত গ্রামসহ প্রায় অধিকাংশ এলাকায় নিযুক্ত করা হয় কমিশন ভিত্তিক এজেন্ট। তারা একটা সিজারের রোগিকে বাগিয়ে নিয়ে আসলে বা পাঠিয়ে দিলেই কমিশন হিসেবে পাচ্ছেন দুই থেকে তিন হাজার টাকা।

আবার অনেকে এর চেয়ে বেশীও পায়। ক্লিনিকগুলো মূলত এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন গ্রাম‍ এলাকার পল্লী চিকিৎসক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী পুরুষ ও মহিলাকে। কেননা গ্রাম এলকার প্রসূতি বা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে এদের যোগাযোগ বেশী হয় এবং এদের পরামর্শটা গ্রহন করে। রোগি দেওয়ার জন্যে এদের প্রত্যকেই মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ক্লিনিকগুলো থেকে কমিশন হিসেবে পেয়ে থাকে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

ক্লিনিকগুলোতে অধিকাংশ রোগী গ্রাম এলাকা থেকে আসে বিদায় কোন চিকিৎসক সিজার করবেন, তিনি কি পুরুষ না মহিলা, সার্জন হিসেব হাত যশ কেমন তা জানার প্রয়োজন হয়না।

স্বল্প শিক্ষিত বা অক্ষর জ্ঞানহীন এই সব মানুষগুলোর এসব বিষয়ে তেমন কোন ধারণা না থাকায় তা জানার প্রয়োজন মনে করেনা। 

আর তাই সার্জন নয় এমন ব্যক্তিরা প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজার করে যাচ্ছেন। 

তেমন ডা মাসুদ. একজন অচেতনের চিকিৎসক হলেও তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রায় ৫ থেকে ৬টি সিজার করছেন বলে ক্লিনিকগুলো সূত্রে জানা  যায়।

সার্জন না হয়েও বিভিন্ন ক্লিনিকে ডা. মাসুদের প্রতিদিন সার্জারি করার বিষয়টি জেলার সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছেন। সচেতন মহল মনে করেন তার এই সার্জারি করার ক্ষেত্রে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনাসহ প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে। এখানে গত কয়েক মাসে আগে ডা. মাসুদ গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক প্রসূতির সিজার করার সময় নবজাতকের মৃত্যূ হয়। এ ঘটনায় ডা. মাসুদের নামে মামলাও করা হয়।

ক্লিনিকগুলো সূত্রে আরো জানা যায়, ডা. মাসুদকে যদি সিজারের জন্য ডাকা হয় সেক্ষেত্রে আলাদা করে অচেতনের চিকিৎসক ডাকতে হয় না। তাই ক্লিনিক মালিকরা তাদের লাভের কথা ভেবে একজনকে দিয়ে দুই কাজ করিয়ে নিতেই সিজার করতে ডা. মাসুদকে ডেকে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ক্লিনিক ম্যানেজর বলেন, "আরে ভাই মাসুদ স্যার হলেন একের ভিতর দুই। একজনকে দিয়ে দুই কাজ। উনাকে ডাকলে আর এনেস্থেসিয়ার ডাক্তারের জন্য আর কাউকে ফোন দিতে হয়না।" 

এসময় ওই ক্লিনিকেরই ওটিবয় বলে উঠেন,  "আরে ভাই কি যে বলেন, মাসুদ স্যার সিজার করেন এটা ভালো কারণ তিনিএকজন পাশ করা ডাক্তার। নরসিংদীতে  কোন  ডাক্তার  নন বা নার্সও নন এমনও ব্যক্তিও সিজার করার মত অনেক নজির আছে। যিনি শুধু মাত্র ডাক্তারের সাথে থেকে  দেখে দেখে শিখেছেন।"

এব্যাপারে ডা. মাসুদের সাথে কথা বলতে শিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সাথে। এসময় পাশে অন্যান্য লোকজন দাঁড়ানো ছিলো বিধায় তার রুমে বসার কথা বললে সেটা অপরিস্কার তাই এখানে দাঁড়িয়েই তিনি কথা বলবেন বললেন।

তার সিজার করার বিষয়টি জানতে চাইলে  বলেন, তিনি সার্জনদের প্রশিক্ষক তাই তিনি সার্জারি করতে পারেন। প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের মোবাইল ফোন থেকে সার্টিফিকেটও দেখাতে চাইলেন। একজন সার্জনের মূল্যায়ন আর একজন অচেতনের চিকিৎসকের মূল্যায়ন এক কিনা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আসলে সার্জনের মূল্যায়নটাই বেশী।

তাহলে তিনি সার্জন না হয়ে অচেতনের মত বিষয়টাকে বেছে নিলেন কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে এনেস্থিসিয়া ডাক্তারের অভাব রয়েছে। ফলে বর্তমানে এনেস্থিসিয়া ডাক্তারের বেশ কদর তাই এই বিষয়টাকে চয়েজ করি।

তিনি জানান, শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ৮ বছর কোন সার্জন ছিলোনা। সে সময় ওই হাসপাতালটিতে তিনিই নাকি সার্জারি করতেন।

শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফিরোজ শাহীনুর রহমান (ডলার) বলেন, ডা. মাসুদ আমার সময়ে এখানে কোন সিজার করেননি। এর আগে যদি সিজার করে থাকলে তা আমার জানা নেই।

এব্যাপারে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)’র সাবেক সভাপতি ডা. গোলাম দস্তগীর বলেন, 'একজন এমবিএস ডাক্তার সার্জারি করায় আইনি কোন বাধা নিষেধ নেই। ইচ্ছে করলে যে কোন এমবিএস ডাক্তার তা করতে পারেন। তবে এটা করা ঠিক নয়।'

নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, 'এ বিষয়টি আমি অবগত নই। তাই আমাকে আগে জানতে হবে তিনি কোথাও কোন সার্জারি করেন কিনা আর উনার সার্জারি করার কোন সার্টিফিকেট আছে কি না।'  

জাগো নরসিংদী/শহজু

 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ