• নরসিংদী
  • রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

রায়পুরার মির্জারচর ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকান্ড : চলছে লুটপাট চাঁদাবাজি!


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৩২ পিএম
রায়পুরার মির্জারচর ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকান্ড : চলছে লুটপাট চাঁদাবাজি!
ভাঙচুরকৃত ঘর। ছবি : জাগো নরসিংদী

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চল মির্জাচর। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দূর্বৃত্তদের গুলিতে নিহতের পর এ হত্যাকে পুঁজি করে প্রতিনিয়তই চলছে একটি গ্রুপের নীবর চাদাঁবাজি ও লুটপাট ভাংচুরের মহোউৎব।

এ তান্ডব যেন '৭১এর পাকবাহিনীকেও হার মানাচ্ছে। এসব প্রতিকুলতার মধ্যে বাস করতে হচ্ছে ওই এলাকায় বসবাসকারীদের।

যার ফলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মির্জারচর, মির্জারচর পূর্বপাড়া, বেপারীপাড়া এবং বালুচরের নারী ও শিশুরা।

আর এ সব অভিযোগের তীর নিহত চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থক ইমান আলী, জিয়া ও সিরাজুল ইসলাম সাগর, সুজন, সুলাইমান, জাহাঙ্গীরের দিকে।

মূলত চেয়ারম্যান নিহতের পর প্রতিপক্ষ ফারুকের লোকজন বাড়ীঘর ছেড়ে যাওয়ায় এ সুযোগটা কাজ লাগিয়ে এলাকায় লুটপাট ও অরাজকতার মাধ‍্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল।

এই লুটেরা চাঁদাবাজদের বরবর্তার শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে অর্ধশত বাড়ীর লোকজন এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর বসবাস করছেন। আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে ।

অন্যদিকে উক্ত সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে যারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন মোবাইল ফোনে তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে মোটা অংকের চাঁদা। তাদের কথামতো চাঁদা পরিশোধ না করলেই রাতের আঁধারে বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মির্জারচর গ্রামটিতে আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো।

টানা দুই বার ইউপি নিবার্চনে ফিরোজ মিয়া ও তার ছেলে ফরুকুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়েও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মানিকের কাছে পরাজিত হয়।

আর এতেই তাদের মধ্যে আরো গভীর শক্রার সৃষ্টি হয় এবং পরিশেষে দূর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ দিতে হয় চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকে।

এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে গ্রামছাড়া হয় ফিরোজ মিয়া ও তার সমর্থকরা। ফিরোজ মিয়ার গ্রুপের সমর্থকা গ্রাম ছাড়া হওয়ায় এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মহিলাদের ভয় দেখিয়ে নিরব লুটপাট ও চাদাঁবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন নিহত চেয়ারম্যানের সমর্থক সুবিধা বাদি একটি মহল।

সরেজমিনে মির্জারচর ঘুরে দেখা যায়, মির্জারচর, মির্জারচর পূর্বপাড়া, বেপারীপাড়া এবং বালুচরের এলাকা পুরুষ শূন্য। কিছু কিছু বাড়ীর ঘরে নেই কোন দরজা জানালা, নেই টিনে চাল ও বেড়া। অনেকে আবার ভিটে মাটিতে ঘরছাড়া অবস্থায় খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছেন। এ অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলে ভয়ে কিছু বলতে রাজি হচ্ছে না তারা।

তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, চাঁদাবাজরা এলাকার একটি পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ঘটে বিপত্তি। চাঁদাবাজরা লোকজন নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরে থাকা আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা, গরু-ছাগলসহ খুলে নিয়ে যাওয়া হয় টিনের চালও।

লুটপাটের শিকার ভুক্তভোগীরা সব হারিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার খাবে তারও কোনো সুযোগ নেই। লুটে নিয়েছিল চাল, ডাল, তেল ও অন্যান্য খাবার জিনিসগুলোও। অপর দিকে কারো আধাপাকা ঘর থাকলে লুটপাটের পর টিনের চাল নেওয়ার পর দেয়াল ভেঙে ইট পর্যন্তও খুলে নিচ্ছে।

তার মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর বালুচর গ্রামের খালেক মিয়ার বাড়ী, ১০ ডিসেম্বর বেপারী পাড়ার নাজির হোসেনের বাড়ী, ১৩ ডিসেম্বর একই এলাকার আলী আহম্মেদের বাড়ী, ১৫ ডিসেম্বর হাছান আলীর বাড়ী, ২৬ ডিসেম্বর মিজার্চর গ্রামের নোয়ার আলীর বাড়ী, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর পর পর দুই দিন মির্জারচর পূর্বপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলামের বাড়ীতে হামলা করে বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট করে নগর টাকা, স্বার্ণলংকার, গরু,ছাগল ও ঘরে আসবাপত্রসহ সবকিছু নিয়ে যায়। যার সময় হুমকিও দিয়ে যায় এ ব্যাপারে পুলিশি কোন ব্যবস্থা নিলে প্রাণনাশের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহসও পায়না তারা।

এদিকে মির্জারচর কান্দাপাড়া গ্রামে গত ১৫ জানুয়ারি এক প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর মহিলা বাদী হয়ে প্রয়াত চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের ভাই হানিফ মিয়াসহ ২২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে ফিরোজ মিয়ার সমর্থিত লোকজন। তবে কোন কোন পরিবার দলে না থাকলেও তাদের বাড়িঘরেও প্রায়ই ঘটছে এসব ভাংচুর ও লুটপাট। তারা ভয়ে মুখ খুলতে চান না কেউ।

ভুক্তভোগী মহিলা জানান, গত ১২ জানুয়ারি প্রয়াত চেয়ারম্যান মানিক মিয়ার সমর্থিত লোকজনেরা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না দিলে তারা আমার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করবে এমন হুমকিতে আমি তাদের ৪০ হাজার টাকা দেই।

তিনি বলেন, পরে ১৫ জানুয়ারি দুপুরে তারা প্রায় অর্ধশত লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ১ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলে। আমার কাছে ওই সময় টাকা না থাকায় আমি টাকা দিতে আস্বীকার করি। পরে তারা আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। আমি কোন উপয়া না দেখে মির্জারচর পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিলে পুলিশ এসে মালামালসহ হাতেনাতে কিছু সংখ্যক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে।

তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যান হত্যার পর এ গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে তারা। তারা নগদ টাকা, টিভি, ফ্রিজ, স্বণালংকার, গরু-ছাগল, ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ চাল-ডাল গুলোও নিয়ে গেছে। তাদের ভয়ে গ্রামের মানুষেরা অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে। যারাও আছেন তারাও আমার মতো নির্যাতন সহ্য করে তাদে চাঁদা দিয়ে গ্রামে থাকতে হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রয়াত চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিকের ছোট ভাই হানিফ মিয়া বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ফারুকের সমর্থিত লোকেরা নিজেরায় নিজেদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র নিয়ে গেলে তো আমরা তাদের বাঁধা দিতে পারি না।

এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত গোবিন্দ সরকার বলেন, 'মহিলার অভিযোগের পর আমরা ৮ জনকে গ্রেফতার করেছি এবং মালামাল উদ্ধার করেছি।'

মির্জাচরে আরো প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্হা নেবো।'

জাগো নরসিংদী/শহজু

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ