ইউএনবি : কিছু বছর আগের কথা। কানাডার পশ্চিমাংশে এক খনিতে অন্যান্য দিনের মতোই খনন কাজ চলছিল। একদল খনি শ্রমিক এমন কিছু একটার সঙ্গে হোঁচট খেয়ে বসেন যা মোটামুটি সাম্প্রতিক স্মরণকালের সেরা আবিষ্কার হয়ে দাঁড়ায়। আর হবে না-ই বা কেন! বস্তুটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে অক্ষত ডাইনোসরের জীবাশ্ম।
কানাডার আলবার্টা থেকে ১৭ মাইল উত্তরে একটি খনি প্রকল্পে পাওয়া যায় ‘নোডোসর’। এক সময় পৃথিবীর বুকে বিচরণ করা এই তৃণভোজীর জীবাশ্ম ১৮ ফুট লম্বা এবং ওজন প্রায় তিন হাজার পাউন্ড। নিশ্চয় বিস্ময়কর!
শুধু হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর জীবাশ্ম যে এতোটা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে তা অনেক বিজ্ঞানী, গবেষককে অবাক করেছে। এই প্রাপ্তি সেসময়ের প্রাণীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ভালো ধারণা দিবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ১১০ মিলিয়ন বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ডাইনোসরের যে জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তা দেখে মনে হচ্ছিল তা খুব বেশি আগের নয়। যা প্রমাণ করে এই নোডোসরের মৃত্যুর পর দেহাবশেষের সংরক্ষণ যথাযথ হয়েছে।
বোরেলোপেল্টা নোডোসরের একটি প্রজাতি। যার অর্থ ‘উত্তর ঢাল’। বোরেলোপেল্টার বিচরণ ছিল ক্রিটেসিয়াস যুগে। যার বিলুপ্তি ঘটে সমুদ্রে যাওয়ার পথে নদী থেকে আসা বন্যার পানিতে।
প্রাণীটির কঙ্কালকে ঘিরে থাকা পুরু বর্মের কারণেই জীবাশ্ম এতো দীর্ঘ সময় পরও অক্ষত রয়েছে। এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত টালির মতো প্লেটে আবৃত। সহজভাবে বললে জীবাশ্মের গাঁয়ে রয়েছে ধূসর পুরু ও শক্ত চামড়া।
ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যায় মিলেনিয়াম খনিতে। সেখানেই ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনা করেন শন ফাঙ্ক। তিনিই এই আবিষ্কারের প্রথম সাক্ষী। তার পরিচালনায় খনন যন্ত্রে প্রথম কঠিন কিছুতে আঘাত করে। প্রথম দেখায় তাদের বস্তুটিকে আখরোটের মতো বাদামী পাথর মনে হয়েছিল। কিন্তু তারা কি তখন ভেবেছিল যে এটিই হতে যাচ্ছে ১১০ মিলিয়ন বছরের ডাইনোসরের জীবাশ্ম! উদ্ধার হওয়া অংশ মোটামুটি মুখ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত সামনের অংশ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মাইকেল গ্রেশকো বলেন, ‘ডাইনোসরের শিলীভূত দেহাবশেষ দেখতে বেশ বিস্ময়কর।’
মূলত সাগরে চাপা পড়ে বছরের পর বছর এভাবে থাকার কারণেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
জীবাশ্মবিদদের মতে, এর টিস্যু পচেনি, বরং জীবাশ্ম হয়ে গেছে। এমন ঘটনা যথেষ্ট বিরল।
১৮ ফুট লম্বা ডাইনোসরটি ক্রিটেসিয়াস যুগে বাস করত। একে তার সময়ের গন্ডার হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ এর বর্মে কাটার মতো অংশ ছিল।