স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরায় প্রতিবন্ধী না হয়েও করেছেন প্রতিবন্ধী কার্ড। অংশ নিয়েছেন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায়।
সম্প্রতি রায়পুরা উপজেলার চড় আড়ালিয়া ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে মর্জিনা আক্তারের বিরুদ্ধে।
মর্জিনা আক্তার চড় আড়ালিয়া ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার মেয়ে ও বাঘাইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবিরের স্ত্রীর।
জানা যায়, মর্জিনা আক্তার টাকার বিনিময়ে এক চিকিৎসকের হাতে সে কানে শুনতে পায় না এ মর্মে একটি প্রতিবন্ধী রিপোর্ট তৈরি করে স্থানীয় ইউপি সদস্যে এর মাধ্যমে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছেন।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে সে কোনো প্রতিবন্ধী নয়, একজন সুস্থ্য সবল মানুষ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনায় সহকারি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় সে অংশ নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান বয়স অনুযায়ী তার সরকারি চাকুরী করার বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে, যেখানে সেই শিক্ষার্থী ইভা আক্তার বলেন, লিখিত পরীক্ষায় আমি প্রথম হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ মর্জিনা আক্তার অন্য একজন প্রতিবন্ধী কোটায় বাছাই করা হয়েছে। আমার জানামতে ইতিমধ্যে মর্জিনা আক্তার উনার সরকারি চাকরী করার বয়স সীমা পার করেছেন। এর জন্য তিনি প্রতিবন্ধী কার্ড সংগ্রহ করেন।
এছাড়াও ইভা তার লিখিত অভিযোগে, মর্জিনা আক্তার সঠিক প্রতিবন্ধী কিনা তা পুনরায় ডাক্তারের মাধ্যমে যাচাই করণের দাবি জানান।
ইভা আক্তারের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এক তরুণ সাংবাদিক এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে রায়পুরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে এ বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তাকে কোন তথ্য দেওয়া হবে না বলে সেখান থেকে জানানো হয়। পরে বিষয়টি সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে তার কার্যালয়ে যায় ওই তরুণ সাংবাদিক। নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর হোসেনের কক্ষে ঢুকতেই কি কাজে এসেছেন তার জানতে চান তিনি।
এ সময় ইউএনও'র কক্ষে বসা চর আড়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাসান সরকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম উল্লেখ করে ওই তরুণ সাংবাদিক তারই ভাগিনা বলে পরিচয় করিয়ে দেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাম শুনতে ইউএনও মো. আজগর হোসেন তাকে দালাল বলে উপহাস করে তার ভাগিনা কিনা জানতে চায়। নিজের মামা সম্পর্কে ইউএনও'র মুখে এরকম কটূক্তিমূলক কথা শুনে সেখানে আর বেশিক্ষণ অবস্থান করলেন না ওই তরুণ সাংবাদিক।
এদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে দালাল বলে ইউএনও'র উপহাস করার বিষয়টি সাংবাদিক মহলে ছড়িয়ে পড়লে জেলার একজন সাংবাদিক তার নিজ ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। ওই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে দালাল বলে ইউএনও'র উপহাস করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠে। এতে রায়পুরা উপজেলা জুড়ে বেশ হৈ চৈ পড়ে যায়।
এ বিষয়ে মর্জিনা আক্তারের স্বামীর বাঘাইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হুমায়ুন কবির'র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই'র পর আমার স্ত্রী প্রতিবন্ধী কার্ড প্রাপ্ত হয়। এখানে কোন মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়নি। চ্যালেঞ্জের মুখে তা পুনরায় যাচাই বাছাই হলেও আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি তার প্রতিবন্ধী বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হবে না।
চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, এ ব্যাপারে কোন একজন আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে আমি তার উত্তরে বলি "আমার জানামতে হুমায়ুন মাস্টারের স্ত্রী কানে শুনতে পায় তবে তিনি প্রতিবন্ধী কিনা তা আমি জানিনা।"
রায়পুরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান খলিল বলেন, "কেউ প্রতিবন্ধী কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেয় ডাক্তার। আমরা ওই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়ে থাকি এর বাইরে নয়।"
নরসিংদী জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক অরবিন্দ দত্ত বলেন যেহেতু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এবং সিভিল সার্জন এর উপস্থিতিতে মর্জিনাকে প্রতিবন্ধী বাছাই করা হয়েছে সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ করার কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম জানান, আমার জানামতে মর্জিনা আক্তার একজন শ্রবণপ্রতিবন্ধী। তবে এমন কোন কিছুতেই যদি প্রমাণিত হয় যে সে শ্রবণ প্রতিবন্ধী নয়, প্রতিবন্ধী সাজার নাটক করে ডাক্তারের মাধ্যমে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করিয়ে প্রতিবন্ধী কার্ড নিয়ে থাকে তাহলে তার ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।