• নরসিংদী
  • সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে স্বামী হলেন ধর্ষণের আসামি!


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:১৮ পিএম
নরসিংদীতে স্বামী হলেন ধর্ষণের আসামি!

স্টাফ রিপোর্টার: বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রীর মেলামেশা চিরাচরিত এবং এই মেলামেশায় সামাজিকভাবেও রয়েছে বৈধতা। অথচ নরসিংদীর রায়পুয়ায় নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে প্রায় দুই বছর ঘর-সংসার করার পর তাদের বৈধ মেলামেশায় ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তি হলেন ধর্ষণ মামলার আসামী। তিনি ওই মামলায় দুই মেয়াদে ৪ মাস কারাভোগ করে সবকিছু হারিয়ে বর্তমানে সৌদি প্রবাসী হয়েছেন ।

জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার নবীনগরের বগডহর গ্রামের সায়েদুর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম ও নরসিংদীর রায়পুরার সওদাগর কান্দি গ্রামের শাহজালাল মিয়ার মেয়ে মনিরা বেগম উভয়ে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা দুজনেই পূর্ব বিবাহিত ছিলেন। ইব্রাহিমে প্রথম পক্ষের স্ত্রী এখনও বর্তমান। অপরদিকে মনিরা ইব্রাহিমকে বিয়ের আগেই ওই বছরের ২২ অক্টোবর তার প্রথম স্বামী রূপ মিয়াকে তালাক দেয়।

বিয়ে প্রায় ছয় মাস আগে নবীনগরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মনিরা সাথে ইব্রাহিমের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম অত:পর তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। মনিরার তার প্রথম স্বামীর ঘরে একটি ছেলে স্বামী সন্তান রয়েছে। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর মনিরার বাড়ীর লোকজন প্রথম স্বামীকে তালাক দেয়ার বিষয়টি জানতে পারে। বিষয়টি জানার পর মনিরার মা-বাবা তাকে বাড়িতে আটক করে। এর কয়েকদিন পরে সুযোগ পেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে স্বামী ইব্রাহিমের কাছে চলে যায়। এদিকে মনিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর তার মোবাইল ফোনে বাড়ির লোকজন বারবার ফোন দিতে থাকে কিন্তু সে কোন ফোন রিসিভ করেনি। বেশ কয়েকদিন পর তার মার ফোন রিসিভ করে সে।

বৈধভাবে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয় এ কথা জানানোর পরও মা তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা মেনে নিতে চাইছিল না। এ অবস্থায় রাগের বশবর্তী হয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তের ভিডিও চিত্র মনিরা নিজের মোবাইলে ধারণ করে। পরে ধারণ করা সেই ভিডিও চিত্রের একটি খন্ড অনলাইনে মায়ের মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়।

ওই ভিডিও চিত্র পরিক্ষা করলেই তা কার মোবাইল দিয়ে তোলা সে রহস্য পরিস্কার হবে। এদিকে ইব্রাহিম তার দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরাকে গ্রামের বাড়ি না রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ভাড়া বাসায় নিয়ে তোলে। সংসার সাজাতে যা যা লাগে সে সব ধরনের আসবাবপত্র কিনে এনে মনিরাকে ঘর সাজিয়ে দিয়েছিল। পাশাপাশি মনিরা যখন যে ধরনের গহনার আবদার করেছে স্ত্রীর মন রক্ষার্থে স্বামী হিসেবে ইব্রাহিম তা কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এভাবে তাদের বিবাহিত জীবনের দুই বছরে স্ত্রী মনিরাকে ৬/৭ ভরি ওজনের বিভিন্ন গয়না কিনে দেয় সে। ইব্রাহিম এর কাছে পালিয়ে আসার মাস ৬ পর একদিন মনিরার মা জাহানারা বেগম নবীনগরের বাসায় এসে হাজির হয়। মেয়ে মনিরা ও মেয়ের জামাই ইব্রাহিমকে বেড়ানোর নাম করে রায়পুরার সওদাগর কান্দিতে নিয়ে আসে।

সেখানে আসার পর জাহানারা বেগমের স্বরূপ পাল্টে যায়। তার দুই পরামর্শদাতা মনিরার ফুফা জসিম উদ্দিন ও তার বন্ধু আনিসুজ্জামান’র পরামর্শে মেয়েকে আর ইব্রাহিমের সাথে দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দে। ইব্রাহিম স্ত্রীকে হারানোর ভয়ে গ্রামের বিভিন্ন লোকজনদের স্মরণাপন্ন হয়। চাঁনপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বড় ভাই শরীফ সরকার তাকে বাড়ি চলে যাবার পরামর্শ দেয় এবং পরিস্থিতি পরিস্থিতির ঠান্ডা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

পরে ইব্রাহিম চাঁদপুর থেকে তার বাড়ি চলে যায় এর কয়েকদিনের মধ্যেই মনিরা আবার পালিয়ে তার কাছে চলে আসে। আবারো কয়েক মাস দুজনে ভালোভাবেই ঘর সংসার করতে থাকে এর মধ্যে একদিন মনের মা তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আনে। ইব্রাহিম কি সাথে নিয়ে মনিরা বাবার বাড়ি আসলে মনিরার মা-বাবা রায়পুরায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকাতে বলে তাদেরকে। মনিরার মা-বাবার কথায় ইব্রাহিম রায়পুরার থানা-হাটি মহল্লায় মাদ্রাসার পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে মুনিরাসহ থাকতে শুরু করে।

কয়েক মাস পর মনিরা বাবার বাড়ি বেড়াতে আসলে তার মায়ের দুই পরামর্শদাতা জসিম ও আনিসুজ্জামানের কথায় তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ইব্রাহিম এর নামে থানায় মামলা করার জন্য রাজি করায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ ভৈরব ব্রিজ সংলগ্ন আশুগঞ্জ পেট্রোলপাম্প থেকে ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর দিন মনিরার মোবাইলে তোলা সেই ভিডিও চিত্র দেখিয়ে ১ এপ্রিল থানায় ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলা রুজু করে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। স্ত্রী মনিরা বাদী হয়ে করা ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলায় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।

প্রায় দুই মাস কারাভোগের পর ইব্রাহিম ১ জুন জামিনে মুক্ত হয়। ৩ আগস্ট আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে পূনরায় জেল হাজতে পাঠায়। প্রায় দুই মাস কারাভোগের পর ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সে জামিনে মুক্ত হয়। বর্তমানে সে সৌদি প্রবাসী।

স্বামী মিথ্যা মামলায় প্রায় চার মাস কারাভোগ করেছে এর সত্য উদঘাটনের জন্য ইব্রাহীমের প্রথম স্ত্রী নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করলে সম্প্রতি ক্লাবের একটি টিম উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের সওদাগরকান্দি ও সুজাতপুর এলাকা ঘুরে স্থানীয় এবং মনিরার বাবা-মা, মনিরার প্রথম স্বামী রূপ মিয়ার বাড়ীর লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনিরার প্রথম স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী হওয়ার সুবাদে সে স্বামীর অদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত।

সে সবসময় স্বামীর আদর সোহাগের জন্য ব্যকুল থাকতো। তাই কোন যুবক বা পুরুষ মানুষের সাথে পরিচয় হতেই তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে তার বেশী সময় লাগতো না। আর সে সম্পর্ক গড়ায় বিছানা পর্যন্ত। ইব্রাহিমের সাথে পরিচয় হওয়ার আগে মনিরার ছোট বোনের বিয়েতে অনুষ্ঠানের ভিডিও করতে আসা এক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে সে এবং পরে রূপ মিয়ার বাড়ি থেকে ওই ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বাসা ভাড়া নিয়ে ওই ছেলের সাথে বিয়ে না করেই প্রায় ৭ মাস কাটায়।

পরে মনিরার মা জানাহারা বেগম গিয়ে সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে এসে রূপ মিয়ার বাড়ি পাঠায়। সেখান থেকেও আসার সময় মোটা অংকে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে আসে। সেখান থেকে আসার কয়েক মাস পর ইব্রাহিমের সাথে পরিচয় হয় মনিরার। পরে সম্পর্ক এবং স্বামী রূপ মিয়াকে তালাক দেয়, অত:পর পালিয়ে বিয়ে। তাদের এ বিয়ে মনিরার মা মেনে না নিলেও রূপ মিয়ার স্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মনিরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে টাকা ধার নেয়।

সেই ধারের কিস্তির টাকা ইব্রাহিমের কাছ থেকে হাত পেতে নিতে একটুও কুন্ঠাবোধ করতো জাহানারা বেগম। ইব্রাহিম ও মনিরার দুই বছরের সংসার জীবনে প্রায় ১০/১২ লাখ টাকা মনিরা ও তার মা হাতিয়ে নিয়েছে পাশাপাশি মনিরাকে কিনে দেয়া প্রায় ৭ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার।

সরেজমিনে চাঁনপুর ইউনিয়নের সওদাগরকান্দি গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে জানায়, মনিরার মা জাহানারা বেগম খুবই চালাক ও লোভী প্রকৃতির মহিলা। ইব্রাহিমের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে এখন আর কিছু নেই তাই তিনি এবার মেয়ে তার প্রথম স্বামী রূপ মিয়ার বাড়ি পাঠানোর পয়তারা করছেন । আর তাকে বিভিন্ন ভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন মনিরার ফুফা জসিম ও তার আনিজ্জামান।

সুজাতপুর গ্রামে রূপ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার মা, বোন ও ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলে মনিরাকে তারা আবার আনতে চায় কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, মনিরা নিজে রূপ মিয়াকে তালাক দিয়েছে এবং সেই তালাকের কাগজ ডাকযোগে তাদের কাছে পাঠায়। যে মেয়ে নিজে তাদের ছেলেকে তালাক দিয়েছে তাকে কোন অবস্থাতে ঘরে তোলার কথাটি মেনে নিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

পরে সওদাগরকান্দি গ্রামে মনিরাদের বাড়ি গেলে তার বাবা শাহজালাল মিয়ার কাছে মনিরার সাথে ইব্রাহিমের কি সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। তাদের কি বিয়ে হয়নি জনতে চাইলে তিনি বলেন না তাদের বিয়ে হয়নি। রূপ মিয়াকে তালাক দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন ইব্রাহিমকে তালাক দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে বললেন তাদের বিয়ে হয়নি এখন বলছেন মনিরা ইব্রাহিমতে তালাক দিয়েছে বিয়ে না হলে তালাক দিলো কিভাবে এমন প্রশ্নে তিনি চুপ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে এক সাংবাদিক মনিরাকে কি তারা রূপ মিয়ার ঘরে আবার পাঠাতে চায় কি তা জানতে চাইলে শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘রূপ মিয়ার ঘরের আমার যেহেতু একটা নাতি আছে তার বাবা দেশে আসলে সে যদি তার বাবাকে বলে বাবা তুমি যদি আমাকে নিতে চাও তাহলে আমর মাকে তোমার ঘরে তুলতে হবে। ছেলে চাইলে তার বাবা তা না করে পারবে না। তাই রূপ মিয়া আগে দেশে ফিরে আসুক।”

এসময় মনিরার সাথে কথা বলবে সেজন্য তাকে ডেকে দিতে বললে শাহজালাল মিয়ার মনিরার ছেলেকে ঢাকার জন্য ভিতরে পাঠায়। কিছুক্ষণের মধ্যে মনিরার মা জাহানারা বেগম ভিতর হাতেও কানে মোবাইল ফোন লাগিয়ে থেকে এসে জানতে চায় তার সাথে কি কথা বলবে উপস্থিত সাংবাদিকরা এবং মনিরা বাড়িতে নেই বলে জানায়। এসময় তার কানে লাগানো মোবাইল ফোনটি একজন সাংবাদিকের দিকে বলেন নেন কথা বলেন আমার এক দেবর কথা বলবে। মনিরাকে বাড়ি রেখেই নেই বলার বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের বুঝতে বাকী রইল না। মোবাইল ফোনটি কানে ওঅপর প্রাপ্তে কে কথা বলছে জানতে চাওয়া আনিসুরজ্জামান নাম বলে পরিচয় দেন তিনি। পরে তিনি ইব্রাহিম টাকার জন্য মনিরার সাথে সম্পর্ক করে এবং তার কাছে জমানো প্রায় ১০ লাখ টাকা সে হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায়।

পরে এবিষয়টি চাঁনপুর ইউপির চেয়ারম্যান বাবলা সরকার ও তার ভাই শরিফ সরকারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায় মনিরার জমানো টাকা ইব্রহিম হাতিয়ে নেয়ার কথাটা সত্য নয়। মনিরার স্বামী রূপ মিয়া তার নামে কোন টাকা-পয়সা পাঠাতেন না। বরং এই আনিসুজ্জামান ও মনিরার ফুফার প্ররোচনায় মনিরা এবং তার মা ইব্রাহিমের টাকা-পয়সাসহ স্বর্ণ গহনা আত্মসাৎ করেছে। পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে মনিরার পথ থেকে সরিয়ে দিতে আনিসুজ্জামানের পরামর্শ ও সহযোগিতায় থানায় ধর্ষনের মামলা করে।

জাগোনরসিংদী টুয়েন্টিফোর ডটকম/শহজু

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ