• নরসিংদী
  • সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০:২৮ পিএম
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন 

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়ম করে গেলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় সে আরও বেপরোয়া ও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে। রায়পুরাবাসী মনে করেন স্বাস্থ্য বিভাগের কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলয়ে ডা নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অগনিত অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে থাকায় সকলের মনেই আজ প্রশ্ন এই কর্মকর্তার খুটির জোর কোথায়?

ইতোমধ্যেই রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর'র বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ পত্রিকা গুলোতে ফলাও করে  প্রকাশ করা হয়। এসকল সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর  ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর'র স্বরূপ উন্মোচিত হলে সাধারণ মানুষ তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করলে উপজেলা জুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়।

এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দূর্নীতির প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি)দের আত্মসাৎ কৃত মাসিক ভাতার সেই টাকা  ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেও বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম। কিন্তু এতো অনিয়ম ও দুর্নীতির তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা প্রশ্ন উঠেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানকর্তা বিষয়েও।

এত সবের পরেও অনিয়ম ও দুর্নীতি থেমে থাকেনি রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ বলেন, স্যারের প্রত্যক্ষ মদদে হাসপাতালে ব্যাপক দূর্নীতি চলছে। তারা বিভিন্ন ভাবে ভূয়া বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করছে। মিটিং এ মাতৃত্ব শোধন ভাউচার স্কিমে ডেলিভারি না করিয়েও নার্সরা তথ্য লিখে রাখার তথ্য পাওয়ার পরেও তাদের শাস্তি না দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে সবার সামনে গালিগালাজ করা সহ হেনস্তা করা হয়।

সম্প্রতি জাপান সরকারে অর্থায়নের পরিচালিত মাতৃশোধন ভাউচার স্কিম ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্কুলগামী শিশুদের (৫-১৩ বছর) করোনা টিকার আওতায় আনতে  স্কুল প্রোগ্রামে টিকা প্রদানকারীদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সালেহা নামে কর্মরত এক সেবিকাকে সকলের উপস্থিতিতে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হেনস্থা করার  একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ভিত্তিতে  বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর কয়েকজন সাংবাদিক সরেজমিনে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তথ্য সংগ্রহে যায়। 

এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু জানান, জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মধ্যে একমাত্র রায়পুরা উপজেলায় জাপান সরকারে অর্থায়নের পরিচালিত হচ্ছে মাতৃশোধন ভাউচার স্কিম। অসহায় দরিদ্র প্রসূতি নারীদের সেবা দানকারী জাপান সরকারের অর্থায়নে চলা প্রকল্পে রায়পরায় সেবার নামে চলছে প্রতারণা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশনা এতে সেবা না নিয়েই সেবাভোগি প্রসূতিদের নামে গায়েবী  তালিকা করে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও করোনা টিকা প্রদানে সরকারের নেওয়া স্কুল প্রোগ্রামে টিকা প্রদানকারী চারজন সদস্যের টিমে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে টিমের ১৩ দিনে সর্বমোট ২০ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া কথা। তাদের কাছ ২০ হাজার ৮০০ টাকার  বিল ভাউচারে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও মাত্র ৮ হাজার টাকা প্রদানের অভিযোগ পাই। এছাড়াও সালেহা নামের  রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত একজন সিস্টারকে গত ১১ জুলাই  একটা সভা চলাকালে  সকলের উপস্থিতিতে নানা রকম উচ্চ বাক্যসহ খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ পাই।

অভিযোগের ভিত্তিতে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি আমার তিন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে রায়পুরার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে যথারীতি মাতৃশোধন ভাউচার স্কিন প্রকল্পের বিভাগটিতে হাজির হয়ে ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকা ইনচার্জের কাছে গত ছয় মাসের কতজন প্রসূতিকে সেবা প্রদান করেছে তার তালিকা দেখাতে বলি। (প্রাপ্ত অভিযোগে জানতে পেরেছিলাম এই বিভাগে প্রসূতি সেবার নামে যে তালিকা প্রস্তুত করা হয় সেটি একটি গায়েবি তালিকা বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। প্রসূতিদের কোন ধরনের সেবা প্রদান না করেই জাপান সরকারের দেওয়া সেই অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও তার সিন্ডিকেট)। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ আমাদেরকে বসিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর একটি কাগজের টুকরোতে জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত কোন মাসে কয়টি নরমাল ডেলিভারি এবং কয়টি সিজার করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকায় এনে দেয়। তালিকাটির হাতে নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই ইনচার্জকে ওয়ার্ডের ভর্তির খাতায় সাথে মিল আছে কি তা দেখানোর জন্য  খাতাটি নিয়ে আসার অনুরোধ করলে তিনি গিয়ে বিষয়টি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানায়।  

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সেখানে এসে সাংবাদিকদের তর্ক জুড়ে দেন। তাকে  না জানিয়ে কেন তথ্য সংগ্রহ করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছি এবিষয়ে তা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টা অন‍্যায় উল্লেখ করে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এসময় কোনরকম তথ‍্য না  দিয়ে ওল্টো সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ করে।

আমার এক সহকর্মী তার অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে তার বক্তব্য চাইলে তিনি তার কোন জবাব না দিয়ে দীর্ঘক্ষণ বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য এক ব‍্যক্তির সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠে। পরে আবারও তার কাছ থেকে বক্তব্য চাই জবাবে তিনি বলেন "কি বলবেন বলেন"। এ সময় আমি তাকে বলি এখানে দাঁড়িয়ে থেকেই কি আপনি বক্তব্য দিবেন। তিনি হা বললে আমি আমি ওইখানে দাঁড়ানো অবস্থায় তার কোন বক্তব্য নিব না বলে চলে আসি।

এতসব দুর্নীতি ও অনিয়মের পরও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যাবস্থা না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে  কর্মকর্তাদের বেতন -ভাতা নিয়ে সাময়িক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে তাদের সেই টাকা গুলো ফেরত দিয়েছে।

সেখানে সাময়িক সমস্যা থাকতে পারে তবে ইদানিং তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে। কেন এমনটা হচ্ছে এ   বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ