স্টাফ রিপোর্ট: অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক।
এই খবরে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে জুন মাসে একইভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর রায়পুরার একজনের মরদেহ উদ্ধার ও বেলাব উপজেলার ৭ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
নিখোঁজরা হলেন, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আঃ মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।
নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দালালের স্থানীয় দুই সহযোগী দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়া জানান, ৫-৬ মাস আগে তার ভাইকে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেয়ার উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেমঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় নদীপথে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর বহনকারী বোট ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে থাকা ২০ জন থেকে ১২ জন তীরে ফিরে আসলেও ৯ জন নিখোঁজ রয়ে যায়। লিবিয়ায় থাকা দালাল জাকির হোসেনের মোবাইলে ও অন্যান্যদের ফোন করে স্থানীয় মিলন মেম্বার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানতে পেরে আমাদেরকে জানান। এর মধ্য আমার ভাইও নিখোঁজ।
নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, ৮ মাস আগে ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন তার ভাই। কিন্তু সেখানে তার ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়া হয়নি। দুলালকান্দি এলাকার দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন খবর পেলাম আমার ভাই নিখোঁজ।
রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সাথে কথা হয়েছিল, তিনি তার জন্য দোয়া চেয়ে জানিয়েছিলেন আমরা এখন গেম ঘরে আছি। আগামী বুধবারে ডেঙ্গিতে (বোট) তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।
এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া জানান, বিভিন্ন পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে নিখোঁজের খবর পেয়ে লিবিয়ায় থাকা জাকির হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে ফোন দেয়া হলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করে জানান, বোট ডুবিতে জাকির হোসেনের অধীনে থাকা ২০ জন থেকে আমানসহ ১২ জন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেও ৮ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে উদ্ধার হওয়া আমানের সঙ্গেও পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না।
এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে অভিযুক্ত দালাল জাকির হোসেন ও তার ফুফু শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়লে থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.তানভীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে এবং লোক মুখে শুনেছি। এখনো কোন অভিযোগ আসেনি, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, 'ইতালি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকজন নিখোঁজের সংবাদ লোকমুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।'
নিখোঁজের বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।