• নরসিংদী
  • রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদী সদর দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫২ পিএম
নরসিংদী সদর দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম 
দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কার্যকরি পরিষদের মেয়দকাল শেষ হওয়ার প্রায় ২৫ দিন পর গত ১৫ মার্চ কাউকে কিছু না জানিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা না করেই হঠাৎ ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি উপহার দিলেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূরে আলম ভূঁইয়া। আর তার এ কাজের সহযোগি হিসেবে ছিলেন শিবপুর দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মুকুল ও পলাশ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন। যারা নিজেদের সমিতিতেই বিশৃংখলাকারী হিসেবে চিহ্নিত। 

জানা যায়, নূরে আলম ভূঁইয়া নিজের হাতকে শক্তিশালী করতে এবং সাধারণ দলিল লেখকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করার কৌশল হিসেবে সমিতির প্রধান উপদেষ্ঠা করে নেন মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে। এছাড়া তার চাদাবাজির সহযোগিতা করার জন‍্য সদর দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক করেন রাজনৈতিক দলের রেজিষ্টেশন বাতিল হওয়া সেই জামায়াতে ইসলামীর বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে নেতৃত্বদানকারী, বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক দফা কারাভোগকারী জহিরুল ইসলামকে।

আর সদস‍্য সচিব করেন তারই আস্থাভাজন নবীন সদস্য মামুন ভূঁইয়াকে। সমিতির সুন্দর একটি কমিটি উপহার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ৯০ দিনের জন্য করা ১১ সদস‍্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন করেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূর আলম ভূঁইয়া।

এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠু, বাকী ৮ জনকে কার্যনির্বাহী সদস্য হলেন- আতাউর রহমান, আ: আজিজ, কবির হোসেন, আলী হোসেন , দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মাহবুব হোসেন মামুন ও মোকলেছুল হক মানিক।

আহবায়ক কমিটি অনুমোদনের পর সমিতির প্রধান উপদেষ্টা করেছেন মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল পবিত্র ওমরা পালনের জন‍্য সৌদি আরব গেলে তার অনুপস্থিতির এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছেন নূর আলম ভূঁইয়া।

আহবায়ক ও সদস‍্য সচিবের মাধ‍্যমে ঈদ বোনাসের নামে সমিতি ফি বাবদ প্রতি দলিলে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে আদায় শুরু করে। দলিল সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়কের কাছে জমা দানের পূর্বে সমিতিতে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়। সমিতি থেকে সিরিয়াল নেওয়া না থাকলে অফিস সহায়ক বাছেদ তা প্রত্যাখান করে বলেন, “সিরিয়াল নিয়ে আস নতুবা দলিল রেজিষ্ট্রি হবেনা।”

একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য তিন মাসের জন্য গঠন করা সেই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে ৮ মাস শেষ হয়েছে। গঠন করা এই আহবায়ক কমিটি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্টো ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে আছে অতিরিক্ত আরও পাঁচ মাস। পাশাপাশি দলিল লেখকদের কাছ থেকে ঈদ বোনাসের নামে আদায় করা অতিরিক্ত এক হাজার টাকা এখনো আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে বোনাসের নামে আদায় করা অতিরিক্ত এই অর্থ তাহলে কোন খাতে ব‍্যয় দেখানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন, ‘ একটা দলিল রেজিষ্ট্রি করলে আমরা পারিশ্রমিক হিসেবে পাই ২/৩ হাজার টাকা। যা থেকে বর্তমানে নূর আলম ভূঁইয়া সাহেবকে সমিতির নামে ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের চলা দায় হয়ে পড়েছে।

দলিল লেখকরা অভিশাপ দিয়ে আর্তনাত করে বলেন, “কেন কি কারণে নূরে আলম ভূঁইয়ার নিদের্শে আমাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করছে। যা দিতে গিয়ে আমার ঘরে খাবার নিতে পারছিনা।”

সমিতির কয়েকজন প্রবীণ দলিল লেখক বলেন, “উনার দামী গাড়ী দামী বাড়ী, দামী পোশাক আছে। এবং মাস্তান পোষেণ। উনার কথার উপর কেউ কোন কথা বলার সাহস রাখে না। কিছু বলতে গেলে তিনি সনদ বাতিলের ভয় দেখান। দুর্নীতির দায়ে সদর সাব-রেজিষ্ট্রার নিহার রঞ্জণ বিশ্বাস গত ৩ মাস পূর্বে বরখাস্ত হন। আমাদের ভূঁইয়া যে কখন বরখাস্ত হবেন তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। আমরা উপর ওয়ালার কাছে বিচার দাবী করছি।যেন আমাদেরকে এই জুলুমবাজের হাত থেকে রক্ষা করেন।"

এসময় দলিল করতে এক ব্যক্তি অনেকটা উৎসুক স্বরে তার দলিল লেখককে জিজ্ঞেস করেন আচ্ছা আপনাদের অফিসে প্রতিদিন প্রায় কতগুলো দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। জবাবে ওই দলিল লেখক জানান , কম করে হলেও প্রতিদিন প্রায় ১০০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়।

এই কথাশুনে দলিল করতে আসা ওই ব্যক্তি বলে উঠেন , মানুষ কোটি টাকা বিনিযোগ করে দৈনিক ২০ হাজার টাকা ব্যবসা (আয়) করতে পারে না। আর আপনাদের নূরে আলম ভূঁইয়াতো দেখছি বিনা পূঁজিতে প্রতিদিন দলিল প্রতি যদি ২ হাজার টাকা নেয় তাহলে ২ লাখ টাকার উপরে আয় করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনিতো শিল্পপতিকে হারমানাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দলিল লেখক বলেন, “১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে লুঙ্গি গামছা পড়ে এদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বহু আত্মদান আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে দেশ। স্বাধীনতার এতবছর পর জাতীয় পার্টি থেকে আসা নেতা নূরে আলম ভূঁইয়া দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোথায় স্বাধীনতা? কোথায় মুক্তি? আজ তার হাতে আমাদের মত সাধারণ দলিল লেখকদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। তাইতো আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করে বলতে চাই । নরসিংদী সদর দলিল লেখক সমিতি সদস্যদের প্রতি হওয়া এ অনিয়ম অত্যাচার ও জুলুমের বিষয়টি আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা স্বাধীনতার স্বাদগ্রহণ একজন সফল নাগরিক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

সাধারণ দলিল লেখকদের এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সদর দলিল লেখক সমিতির সদস্য সচিব মামুন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বোনাসের দুই হাজার টাকার বিষয় শুনতে তিনি বলেন, কে বলেছে আপনাকে? এ বিষয়ে জানতে হলে অফিসে আসেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এব্যাপারে কমিটির আহবায়ক জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রিয় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নরসিংদীর দলিল লেখকদের অভিভাবক নূরে আলম ভূইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। ফলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।- চলবে

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ