নরসিংদীর শিবপুরে ক্লুলেস ডাবল মার্ডারের ঘটনায় জড়িত অন্যতম প্রধান আসামী উমেদ আলী ও তার সহযোগী আক্রাম হোসেনকে সাড়ে ১৬কেজি গাঁজা ও ২টি মোবাইল ফোন সহ গেফতার করা হয়েছে। র্যাব-১১, সিপিএসসি, নরসিংদী-এর একটি চৌকস অভিযানিক দল নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন দৌলতকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে আজ রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ উমেদ আলী(৩৫) নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন হাসিমপুর কলাবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবু সাঈদ এর ছেলে এবং তার সহযোগী মোঃ আকরাম হোসেন(৩৪) নরসিংদী জেলার মাধবদী থানাধীন নওয়াপাড়া ভগিরতপুর গ্রামের মৃত হাজী ফিরোজ মেম্বার এর ছেলে।
এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১, সিপিএসসি, নরসিংদী-এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা,পিএসসি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রাথামিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গত ০৩ ফেব্রুয়ায়ী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবপুরের শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে বস্তাবন্দী অজ্ঞাত দুই যুবকের লাশ শিবপুর থানা কর্তৃক উদ্ধার করা হয়।
নিহত দুইজন হলেন, পলাশ উপজেলার খানেপুর গ্রামের রুবেল মিয়া (২৫) ও নরসিংদী সদর উপজেলার শাহেপ্রতাব এলাকার জাহিদ হোসেন রাজু (৩০)। পরিচয় শনাক্তের পরপরই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে র্যাব। পরে নানা তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে জোড়া খুনের অন্যতম মূল আসামি উমেদকে গ্রেফতার পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদক কারবারের সহযোগী আকরাম হোসেনকে রায়পুরা উপজেলার দৌলতকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় আকরামের কাছ থেকে ১৬.৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে র্যাব নিশ্চিত হয় যে, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে বুধবার রাতে রুবেল মিয়া রেন্ট-এ-কারের চালক শাহজালালকে ফোন করে মাধবদীতে একটি ট্রিপ থাকার কথা বলে।
পরে রুবেল, শাহজালাল ও রাজু ০৩জন শাহাজালালের বাসায় একত্রিত হন। এসময় শাহাজালালের বাসায় সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী উপস্থিত ছিল। এসময় মাদক বিক্রয় অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে রাজু ও রুবেলের সাথে সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের সহযোগীদের বাক বিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। রাজু, রুবেল ও শাহাজালাল ০৩জনই পেশায় গাড়ী চালক।
সোহেল, উমেদ ও তার সহযোগীরা ভিকটিমদের কাছ থেকে তাদের সাথে থাকা ০২টি প্রাইভেট কার নিয়ে নেয় এবং সেই গাড়ী দিয়ে হত্যার শিকার রাজু, রুবেলকে শিবপুরের বড়ইতলা মনিরের বাড়িতে যায়।
সেখানে মাদকের অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে উমেদ, সোহেল ও তার সহযোগীরা পুনরায় ভিকটিমদেরকে মারধর করে। এক পর্যায়ে উমেদ ও তার অবশিষ্ট সহযোগীরা শ্বাসরোধ করে রুবেল ও রাজুকে হত্যা করে। হত্যা কান্ড সংঘঠিত হওয়ার কিছুক্ষন পূর্বে আকরাম ও আলমগীর নামক মাদক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওইসময় শাহজালাল ও কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে র্যাব উমেদকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, উমেদ ও সোহেলের সাথে রাজু ও রুবেল এর মাদক কারবারের পূর্বের বিরোধ ছিল। আকরাম মূলত তাদের মাদক কারবারের সহযোগী এবং যে মাদকের কারণে হত্যা কান্ডটি হয়েছে সেটি আকরামের কাছে আছে, যার প্রেক্ষিতে আকরামকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছে রক্ষিত ১৬.৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
আরও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, তারা সিলেট থেকে মাদক এনে নরসিংদী ও তার আশে পাশে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত। মূলত মাদক কারবারির আধিপত্য ও টাকা লেনদেনের বিরোধে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী উমেদ ও আকরামের বিরুদ্ধে মাধবদী, রায়পুরা ও ঢাকার বাড্ডা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জোড়া খুনে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব ফোর্সেস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। নরসিংদী জেলায় সংগঠিত হত্যা, মাদক, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী,ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীসহ সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধ রুখে দিতে র্যাব-১১ অভিযান আরও জোরদার করেছে।
উল্লেখ্য, পুলিশ উমেদ আলীর সাথের অপর অন্যতম আসামী সোহেলকে গেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এ নিয়ে উল্লেখিত ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার হলো।
উল্লেখ্য, পুলিশ উমেদ আলীর সাথের অপর অন্যতম আসামী সোহেলকে গেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এ নিয়ে উল্লেখিত ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার হলো।