• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ;   ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহিদ আসাদকে স্মরণ


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:০৫ পিএম
নরসিংদীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহিদ আসাদকে স্মরণ

মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক শহীদ আসাদকে স্মরণ করেছেন নরসিংদীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সোমবার (২০ জানুয়ারি) ৫৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে সকালে জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে শহীদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা্।

 ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এ দিনটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আসাদের মৃত্যু ছিল এক বীরের মৃত্যু। পাকিস্তানের সামরিক শাসক একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী আইয়ুবের স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে সাহসী যুদ্ধ করতে গিয়ে আসাদ জীবন দিলেন। আসাদের জীবনদান গোটা জাতিকে নতুন জীবনে জাগিয়ে তুললো। 

আসাদ শহীদ হওয়ার তিনদিন পর শোক পালন শেষে, ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। বিদ্রোহে ফেটে পড়লো গোটা জাতি। জন্ম নিল ঐতিহাসিক ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। পতন ঘটলো আইয়ুব খানের। ৬৯’র ২০ জানুয়ারি ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আদায়ের স্মরণজয়ী শপথের দিন। সেদিনের গণঅভ্যূথান এক কাল জয়ী প্রেরনা।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহীদ আসাদের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি গণঅভ্যুথ্থানে নিহত সকলের স্মরণে দোয়া করা হয়। শহীদের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন, সদস্য সচিব মনজুর এলাহী, যুগ্ম আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, শিবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হারিছ রিকাবদার, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মৃধা, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল ইসলাম মিন্টুসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি  ও আসাদের সহযোদ্ধারা বলেন, ৬৯ এর অভ্যুথ্থান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তৈরীতে যেমন ভূমিকা রেখেছিলো ঠিক তেমনভাবে আসাদের আত্মত্যাগের স্পৃহা নিয়ে ২৪ এ এসে স্বৈরাচার পতন করেছে শিক্ষার্থীরা। স্বৈরাচার আইয়ুব খান পতনে আসাদের নানাবিধ ভূমিকা ও বিগত সময়ে জাতীয় পর্যায়ে আসাদের মূল্যায়ন নিয়েও নানাবিধ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তারা।

দুপুর শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ ও শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শহীদ আসাদ দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আসাদ দিবসের নানা কর্মসূচী পালন করছে শহীদের গ্রামের বাড়ি ধানুয়াসহ শিবপুরের বিভিন্ন স্থানে।

শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে।  সেসময় তার বাবার মৌলভী মোহাম্মদ আবু তাহের হাতিরদিয়া ছাদত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন । তিনি ১৯৬০ সালে শিবপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন সম্পন্ন করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়।

১৯৬৩ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি,এ এবং ১৯৬৮ সালে এম,এ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা সিটি ল, কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ছাত্র হিসাবে তিনি ঢাকা হলে বতর্মানে শহিদুল্লাহ হলে থাকতেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন ঢাকা হলে ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন (মেমন গ্রুপ) আবহায়ক। 

১৯৬৯ এর আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ঢাকার রাজপথ। স্বৈরশাসক আইয়ূব খানকে উচ্ছেদের জন্য ছাত্র সমাজ সর্বদলীল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১১ দফা র্কমসূচি ঘোষনা করে। আন্দোলন জোরদার হতে থাকলে স্বৈরশাসক মিছিল সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারী করে। ২০ জানুয়ারি পুলিশী জূলুমের প্রতিবাদের হাজার হাজার ছাত্র, ছাত্রী উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তরে ছাত্র নেতৃবৃন্দের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্তর থেকে বিরাট মিছিল বের হয়। মিছিলের একাংশ ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা ধরে চানখার পুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় স্বশস্ত্র পুলিশ ইপিআর বাহিনী দ্বারা বাধা গ্রস্ত্র হলে সংঘর্ষের সূষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেলা আনুমানিক দেড়টায় মূল ঘটনা অনতি দূরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকে প্রধান ফটকের পাশে ফুটপাতে জন্য পুলিশ অফিসারের পিস্তলের গুলিতে আসাদের হদপিন্ড বির্দীন হয়। গুলিবিদ্ধ আসাদের লাশ হাসপাতালের নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরের দিন ২১ জানুয়ারি নিজ গ্রাম শিবপুরের ধানুয়ার পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 
 

উৎসব / দিবস বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ