স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে বের করা শোভাযাত্রায় দেশের অহংকার ও গৌরবের প্রতিক লাল সবুজের কাপড়ে বানানো দেশের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আরো ৭ শ্রেনীর মানুষ তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা বহন করার বিধান থাকলেও নরসিংদীতে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ বের করা শোভাযাত্রায় তা মানা হয়নি। ওই শোভাযাতায় অংশ নেওয়া একটি প্রাডো জীপ গাড়ীর অগ্রভাগের বাম পাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং ডান পাশে ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রতিক বহনকারী পতাকা ঝুলতে দেখা যায়।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় জাতীয় পতাকা বহনকারী প্রাডো জীপ গাড়ীটির অবস্থান ছিল পীরজাদা মোহাম্মদ আলী'র গাড়ীর ঠিক পিছনে। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ওই গাড়িতে জাতীয় পতাকা বহন করে জাতীয় পতাকাকে অবমাননার পাশাপাশি পতাকা উড়ানোর সরকারী সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে বলে মনে করছেন নরসিংদীর সচেতন মহল।
জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৭ধারায় জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। যদি পাশাপাশি ২টি পতাকা উত্তোলন করা হয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা যে ভবনে বা যে স্থানে উড়ানো হবে তাতে ডান দিকে এবং অপরটির তুলনায় উপরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। জাতীয় পতাকার ওপর অন্য কোনো পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু নরসিংদীতে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় গাড়িতে উড়ানো ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রতিক বহনকারী পতাকাটি জাতীয় পতাকা থেকে তুলনামূলক বড় ও উপরে ছিল। যা শুধু জাতীয় পতাকাকে অবমাননাই নয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক হচ্ছে আমাদের প্রিয় লাল সবুজ পতাকা। জেনে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক, জাতীয় পতাকার অবমাননা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় পতাকা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞতার কারণে তার লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। তাই সকল সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সকল কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেমন-ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যেকোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণে এবং কনসুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা ছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার বিধান করা হয়েছে। অর্ধনমিত রাখতে হলে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম হলো, অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের প্রাক্কালে পতাকাটি পুরোপুরি উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থানে আনতে হবে এবং পতাকা নামানোর প্রাক্কালে পতাকাটি শীর্ষে উত্তোলন করে নামাতে হবে।
ইচ্ছা করলেই যে কেউ তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। কোন কোন ভবনে ও কারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন, এ সম্পর্কে ওই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও অফিসে সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
সেই হিসেবে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় যাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে তারা জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কোন কোঠায় পড়েনা বিধায় এ নিয়ে সর্বত্র নিন্দার ঝড় বইছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলী'র মোবাইল ফোনে বেশ কয়েক বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।