মো.শাহাদাৎ হোসেন রাজু: নরসিংদীর সনাতন ধর্মালম্বীদের কাঁদিয়ে কৈলাসে শিবের কাছে ফিরে গেলেন মা দুর্গা। এ বছর জেলায় ৩৫৬ টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে আনন্দময়ীর আগমনে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরের পাঁচদিন ধরে জেলাব্যাপী মণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।
পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব উদযাপন শেষে বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে প্রতিমা বিসর্জনে যোগ দিয়েছে নরসিংদীর সনাতন ধর্মালম্বীরা। আগামী শরতে আবার তিনি আসবেন তার বাবার বাড়ি এই ধরণীতে। বিদায়লগ্নে দেবী দুর্গাকে বেদনাবিধূর তেল, সিঁদুর ও পান দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
সন্ধ্যার পর থেকে মন্ডপগুলো থেকে নরসিংদী পৌর দশমীঘাটের উদ্দেশ্যে প্রতিমা বিসর্জনে বের হন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় সব অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির বিকাশের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে- এ প্রার্থনা করেন তারা। ঢাকের বাদ্যে বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে মেঘনার শাখা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় মা দুর্গার প্রতিমা। নরসিংদী শহরের অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় নরসিংদী পৌর দশমিক ঘাটে।
রাত ১০টা থেকে দুর্গা দেবীর প্রতিমা বিসর্জন শুরু করেন ভক্তরা। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। পুরো নরসিংদী জেলায় একযোগে চলে এই বিসর্জন। দেবী দুর্গা এবার এসেছিলেন হাতিতে চড়ে, আর চলে গেলেন নৌকায় চড়ে।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে শেষ হলো দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। নেচে-গেয়ে দুর্গা দেবীর প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন ভক্তরা। এর মাধ্যমে এই বছরের মতো শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা।
সন্ধ্যা রাণী রায় নামে এক নারী বলেন, পূজা উদযাপন শেষে মা দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছি। দিন যাবে, মাস যাবে- এভাবে একটি বছর ধরে আবারও পূজা উদযাপনের অপেক্ষা করতে হবে।
সমীর সাহা দাস নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে এবার। দেবী দুর্গার অপেক্ষায় আবারো একটি বছর অপেক্ষায় থাকবো।
প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা নরসিংদী জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অপু সাহা বলেন, শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই এবারের পূজা উদযাপন করেছি। দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছি তাতে কিছুটা খারাপ তো লাগছেই। একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। আবার একটি বছর পর (দেবীকে) পাবো।
নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস বলেন, বিসর্জনের সময় শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। এবারের পূজা উদযাপনের মাধ্যমে সব অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির বিকাশ ঘটবে। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।